অভিনন্দন ঋষি সুনক কে
জয় হোক গণতন্ত্রের।
নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলা যায় একজন এশিয়ান ও অশ্বেতাঙ্গ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছে। এখন শুধু শপথ বাকি।
১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে ঋষির জন্ম। দাদা-দাদির জন্ম ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে। বাবা ডাক্তার এবং মা ফার্মাসিস্ট। স্ত্রী অক্ষতা ও দুুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। ভারতীয় ধনকুবের এনআর নারায়ণ মূর্তির জামাতা ঋষি সুনক। অত্যন্ত মেধাবী ঋষি সুনক অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছেন। ঋষি বৃটিশ পার্লামেন্টে সবচেয়ে ধনী মানুষ। তাঁর রয়েছে রাজার সম্পদের দ্বিগুণ এবং সম্পদের পরিমাণ ৭৩ কোটি পাউন্ড।
মাত্র ৪২ বছর বয়স্ক ঋষি হবেন বিগত দু’শ বছরের ইতিহাসে বৃটেনের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির ছাত্র ঋষি বরিস জনসনের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। থেরেসা মের সময়ে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ঋষি সুনকের পূর্বসূরি লিজ ট্রাস মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বছরে ভাতা পাবেন ১ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড যা বাংলাদেশী টাকায় ১ কোটি ৩০ লাখ।
লিজ ট্রাসকে বিরোধী দল টেনেহিঁচড়ে নামায়নি বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মিছিল মিটিং বা গণ আন্দোলন হয়নি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় নিজ দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং সমর্থন হারার কারণে নিজ থেকেই পতত্যাগ করেন। নিশ্চয়ই আমাদের দেশের ঝানু রাজনীতিবিদরা বলবেন বৃটিশরা রাজনীতিতে একেবারে অপরিপক্ক। ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল তারা জানে না। এক্ষেত্রে আমরা হলাম মডেল।
আমাদের কাছ থেকে তারা শিক্ষা নিতে পারে। দিনের ভোট রাতে করা, বিরোধী দলকে মাঠছাড়া করা এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে কীভাবে বিজয়ী হওয়া যায় এ কৌশল কেবল আমরাই জানি। আর একবার বিজয়ী হতে পারলে কীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে হয় সে জ্ঞান আমাদের ছাড়া আর কারো নেই। ফলে বিশ্বে আমরাই চ্যাম্পিয়ন।
সত্যিকার গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তা ইউরোপ ও আমেরিকায় রয়েছে। জনগণ না চাইলে জোর করে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা তাদের নেই। আমার মতে তাদের অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অর্থাৎ জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। আজ গোটা বিশ্ব শাসন করছে ইউরোপ-আমেরিকা এবং এই শাসন করার ক্ষমতা ও অধিকার তারা সংরক্ষণ করে। তারা মৌলিক মানবীয় গুণে ভূষিত। মিথ্যা বলে না, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না ও আমানত রক্ষা করে। এই তিনটি মৌলিক মানবীয় গুণ কোনো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে থাকলে তারা উন্নতি করবেই।
এখন প্রশ্ন, দুনিয়া শাসন করার পাশাপাশি তারা কি আখেরাতেও পুরস্কৃত হবে। এককথায় জবাব- না, নিজ দেশে তারা যতটা গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ানুগ, বিপরীতে তারা সারা বিশ্বে জুলুম-নির্যাতনের হোতা। তাদের সততা কৌশল (Honesty is the best policy)। তারা আল্লাহর প্রতি ভয় ও বিশ্বাস থেকে দূরে। বিশ্বাসহীনতা ও জুলুমের কারণে আল্লাহপাক তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহান্নাম। আর মিথ্যা, ধোকা-প্রতারণা ও মৌলিক মানবীয় গুণের অভাবে আমরা সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট (মুনাফিক)। রসুলুল্লাহ সা.-এর ঘোষণা মোতাবেক, আমাদের অবস্থান হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপলব্ধি দান করুন ও তওবা করার তৌফিক দান করুন।