মিশরে ফতোয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু
দারুল ইফতা, মিশর কতৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক ফতোয়া বোর্ডের সম্মেলন
আজ ও আগামীকাল কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ইফতা সম্মেলনের কার্যক্রম নিয়ে আরব প্রজাতন্ত্র মিশরের প্রধান মুফতির উপদেষ্টা ডঃ ইব্রাহিম নেগম বেশ কয়েকটি বিষয়কে মনোযোগের কেন্দ্র ও সম্মেলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেনঃ সম্মেলনটির পক্ষ থেকে প্রধান বার্তা হলঃ “পারস্পরিক সাধারণ লক্ষ্য-উদ্দ্যেশ্য সমূহ অর্জন ও অনুধাবনের জন্য ফতোয়া কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতার পদ্ধতিতে একমত হওয়া এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশগ্রহণ এবং সেইসব ফতোয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল রূপান্তরের সহায়তার মাধ্যমে ডিজিটাইজেশন যুগে প্রবেশ করন”।
প্রথম বিষয়: আমাদের এই সম্মেলন এমনসব প্রশ্নের উত্তর যা দেশ-বিদেশের প্রতিটি নাগরিকের মনে ঘুরপাক খাচ্ছেঃ তথা ডিজিটাল বিপ্লব ও মহামারী পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রীয় ফতোয়া সংস্থাগুলির বর্তমান জটিলতা এবং উদ্ভাবনী বাস্তবতার আলোকে তাদের কাজ কীভাবে সম্পাদন করবে ? এ ব্যপারে আমরা বলব: ডিজিটাল রূপান্তরের বিষয়টি একটি জরুরি এবং প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে আমরা একটি দুর্দান্ত কাজ সম্পাদন করেছি এবং আমাদের সম্মেলন এই অর্জনের একটি নতুন পর্যায়ে উপস্থাপন করছে।
দ্বিতীয় বিষয়: বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফতোয়া জিজ্ঞেস কারীদের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে দিয়েছে । জীবনের সমস্ত শাখা প্রশাখায় বিরাট কিছু প্রশ্ন যেমন তাঁর ইবাদাত বন্দেগী সম্পর্কিত প্রশ্ন, তাঁর ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং জীবনে চলতে অন্যদের সাথে তাঁর সহাবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্ন ! এই পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে রোজা পালন রাখবেন ? কীভাবে হজ্ব করবেন? কীভাবে নামাজ পড়বেন ? কীভাবে জাকাত সাদাকা আদায় করা যায় ? তিনি সর্বসাধারণ মানুষের সাথে কীভাবে আচরণ করবেন ? আমাদের সম্মেলন ইত্যাদি এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আগ্রহী, বরং বিপর্যয় ও সংকট সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি বিস্তৃত সমষ্টিগত ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে আগ্রহী ।
তৃতীয় বিষয়: এই মুহুর্তে সবচেয়ে আগ্রহের ও জরুরি বিষয়টি হল ধর্মীয় বক্তৃতা বিবৃতির পুনর্বিন্যাস করণের পথে এগিয়ে যাওয়ার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পূর্ণ করা ; দ্বীন ইসলামকে সমসাময়িক জীবনে কোন ধরণের চরমপন্থা বা অবহেলা না করে যৌক্তিক উপায়ে উপস্থাপন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন । আর এইজন্যই আমরা বলছি: আমাদের এই সম্মেলন হবে ধর্মীয় বক্তৃতা বিবৃতির পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নোত্তর প্রদানে একটি বৈজ্ঞানিক দক্ষতার পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত ।
চতুর্থ বিষয়: সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সঙ্কট, বিপর্যয় ও কঠিন সময়ে কঠিন জীবনযাপনের জ্ঞান দক্ষতা ও অগ্রগামী অভিজ্ঞতা বিনিময় করে একে অপরের কাছ থেকে উপকৃত হতে চায় এবং পারস্পরিক যোগাযোগ নিবিড় করে বিশেষত মিশরীয় ফতোয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের পাথেয় সংগ্রহ করতে বদ্ধপরিকর। সুতরাং আমরা বলতেই পারি: সম্মেলনটি বিশ্বের ৮৫ টি দেশ থেকে ফতোয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বৃহত্তম বার্ষিক সমাবেশের সাক্ষী হয়ে থাকবে ; ফতোয়া প্রদানে অভিজ্ঞদের পরামর্শ ও মতবিনিময় এবং ফতোয়া ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মিশরের নেতৃস্থানীয় অভিজ্ঞতা থেকে সকলের উপকৃত হওয়া।
পঞ্চম বিষয়: বিশ্ব মানবতার দরদি বিবেককে জাগ্রত করা । আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলির মানবিক উদ্বেগগুলিতে অংশ নেওয়া; তারা সকলেই, বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলার হুমকি দেয় এমন সমস্যা সমাধানে এক ও অভিন্নভাবে অবদান রাখতে অংশীদারিত্ব ও উদ্যোগ গ্রহণে ফতোয়ার কার্যকারিতা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে , যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্ব ও আলোচনার শীর্ষে রয়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জল-বিরোধ সমস্যা এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সুরক্ষার জন্য হুমকি এমন সব উপায় ও একক কর্তৃত্বের আশঙ্কা নিরোধে প্রচেষ্টা । এ প্রেক্ষিতেই আমরা বলছি: আমাদের সম্মেলন বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে ফতোয়ার সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করবে এবং ফতোয়ার উদ্দেশ্যগুলিকে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী সংকট সমাধানে কার্যকর অবদান রাখবে।
ষষ্ঠ বিষয়: বিশ্বজুড়ে ইসলামের নামে যতধরনের সামাজিক ও মানবিক গবেষণার গবেষক রয়েছেন এবং একাডেমিক শিক্ষা গবেষণা বিভাগ ও কেন্দ্রগুলির মধ্যে যারা মানুষের সমস্যার সমাধানে বৈজ্ঞানিকভাবে অবদান রাখেন বা এমন সমস্ত বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী তাঁদের কাছে সর্বসাধারণের কিছু কমন জিজ্ঞাসা থাকে: যেমন- ধর্ম কি মানব জীবনের সকল সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে? তাই আমরা এর উত্তরে বলছি: সম্মেলনটি বৈজ্ঞানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান এবং পদ্ধতিগুলির একটি প্যাকেজ উপস্থাপন করবে, যা মানব মনের উদ্বেগজনক সমস্যাগুলির সমাধান পেশে সবিশেষ অবদান রাখবে ।
সম্মেলনটির প্রথম দিনে কুরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সঙ্গীত ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হবে এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন মিশরের প্রধান মুফতি প্রফেসর ডঃ শাওকি আল্লাম । প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করবেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মুস্তফা মাদবুলির পক্ষে ডঃ আমর তালাত মাননীয় তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রী । আর বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন যথাক্রমে ব্যারিস্টার ওমর মারওয়ান, মাননীয় আইন মন্ত্রী । ডঃ মুহাম্মদ মুখতার জুমা, মাননীয় ওয়াকফ মন্ত্রী । ডঃ মুহাম্মদ আল দুয়াইনি , ডেপুটি শায়খ আল আযহার শরীফ । আরও বক্তব্য রাখবেন দেশ বিদেশ থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ।