Site icon World 24 News Network

আফগানিস্তান পুনর্গঠনে তালেবান ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের ঐকমত

গ্রুপ সেভেন

তালেবান কাবুলের দখল নেয়ার পর থেকেই আফগানদের দেশ ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। এখনও দেশ ছাড়তে পারেননি বহু আফগান জনতা। তারা চাইলে যাতে দেশ ছাড়তে পারেন সেই বিষয়েই তালেবানের সঙ্গে কথা বলতে রাজি জি-৭ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। মঙ্গলবার বৈঠকে এই বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন বলেই জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

বৈঠক শেষে জনসন বলেন, ‘জি-৭ বৈঠকে আমরা আফগানিস্তান থেকে মানুষকে বের করে আনার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে তালেবানের সঙ্গে কথা চালানো হবে সেই বিষয়েও একমত হয়েছি। আমাদের প্রধান শর্ত হবে যদি ৩১ আগস্টের পরেও কেউ আফগানিস্তান ছাড়তে চান তাদের সুরক্ষিত ভাবে দেশ ছাড়তে দিতে হবে।’

জনসন জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের উপর তালেবানের অধিকার স্থাপনের পরে যাতে ফের সেখানে জঙ্গি কার্যকলাপ মাথাচাড়া না দেয় ও সেখানকার নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে সে দিকেও নজর দিচ্ছে জি-৭। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যাতে ফের জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়ে না যায়, মাদকের উন্মুক্ত ক্ষেত্র তৈরি না হয় এবং সেখানে যাতে শিশু ও মহিলাদের শিক্ষা, অধিকার সুরক্ষিত থাকে সেই চেষ্টা করবে জি-৭। কারণ জি ৭ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ সেই জন্যই তালেবানের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র: রয়টার্স।

শীর্ষ সাত দেশের প্রধান

৩১ আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পেন্টাগনের সুপারিশ মেনেই এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার বাইডেন বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কাজ যত দ্রুত শেষ করা যাবে, ততই ভালো। তিনি বলেন, তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযানে প্রতিদিন মার্কিন সেনাদের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে। সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির কারণে আফগানিস্তান থেকে দ্রুত চলে আসা দরকার বলে মনে করছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ৩১ আগস্টের যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পূরণে সঠিক গতিপথেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সময়সীমা বাড়ানোর জন্য মিত্রদের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ রয়েছে। তবে আফগানিস্তান থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সরে আসার ব্যাপারে বাইডেন তার আগের অবস্থানে অনড় রয়েছেন।

সময়সীমা বাড়ানোর বিরোধিতা করেছে তালেবানও। সংগঠনটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ৩১ আগস্টের পর মার্কিনদের আফগানিস্তানের মাটিতে দেখতে চান না তারা। বিশৃঙ্খলা বজায় থাকায় কাবুলের বিমানবন্দরে নতুন করে আফগানদের যেতে দেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান।

তবে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজে যুক্তরাষ্ট্রকে তালেবান সহায়তা করছে বলে জানান বাইডেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানকে তাদের কার্যক্রম দিয়ে বিচার করবে। আফগানিস্তান থেকে ইতিমধ্যে কিছু মার্কিনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। তবে এতে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজে ক্ষতি হচ্ছে না বলে বলা হয়। কাবুল বিমানবন্দরে এখনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই বিমানবন্দর থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ।

এদিকে, তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর গোপনে কাবুল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস। রয়টার্স জানায়, গত সোমবার সিআইএর প্রধান কাবুলে মোল্লা বারাদারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কাবুল বিমানবন্দর থেকে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে আনার চলমান প্রক্রিয়ার বিষয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। তবে সিআইএ ও তালেবানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। সূত্র : এপি, রয়টার্স।

শীর্ষ তালেবান নেতৃবৃন্দ

আফগানিস্তানে বিভিন্ন খাতে দক্ষ নাগরিকদের দেশ ছাড়তে উৎসাহ না দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। রাজধানী কাবুলে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বিবিসি ও বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

মুজাহিদ বলেন, ‘প্রকৌশলী, চিকিৎসকসহ অন্য দক্ষ নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদের এটা বন্ধ করতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষ আফগানদের দেশ ছাড়তে বিদেশি দেশগুলো উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের এটা বন্ধ করা উচিত। কারণ দক্ষ নাগরিকের মেধা আফগানিস্তানের দরকার।’ তালেবানের মুখপাত্র মুজাহিদ বলেন, ‘আফগান নাগরিকদের বাড়ি, কর্মস্থল ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরা উচিত। তাদের বিপদের ঝুঁকি নেই।’ আফগান নাগরিকদের ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে মুজাহিদ বলেন, ‘চলুন, একসঙ্গে বাঁচি। আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নারীদের চাকরি করতে স্থায়ীভাবে মানা করা হবে না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ একটি কার্যপ্রণালি নির্ধারণ করবে, যাতে তারা ফের কাজে যোগ দিতে পারেন। ‘এ ছাড়া নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটা পর্যন্ত সরকারি নারী কর্মকর্তাদের বাড়িতেই অবস্থান করা উচিত।’

দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘আপনাদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। দূতাবাস বন্ধ বা কাজ স্থগিত করার প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার পাশাপাশি হাসপাতাল, স্থানীয় সরকার, টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন শিগগিরই চালু করা হবে।’
মুজাহিদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিমান, বিমানবন্দর সবই রয়েছে। এখান থেকে তারা তাদের নাগরিক ও ঠিকাদারদের সহজেই দেশে ফেরত নিতে পারে।’ সূত্র : বিবিসি, এএফপি

শীর্ষ আফগান নেতৃবৃন্দ
বৈঠকরত আফগান তালেবান নেতৃবৃন্দ
Exit mobile version