মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতীয় ঐক্য সরকারের একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছে। মিয়ানমারের রাজনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার পরিস্থিতি, জাতীয় ঐক্য সরকারের কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।
মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করা যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা হচ্ছেন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেভিড শোলে। পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেভিড শোলে একজন ‘আন্ডার সেক্রেটারি’ (সচিব স্তরের) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে তিনি বিশেষ কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
কাউন্সিলর শোলের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের বৈঠকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শোলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটিতে ছিলেন এবং জান্তাবিরোধী নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকটি সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বৈঠকের পরের দিনের তারিখের এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এ বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রাইস এতে বলেছেন, কাউন্সিলর ডেভিড শোলে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো তুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তিনি। মুখপাত্র প্রাইস জানান, বৈঠকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দ্রুত ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি সব নৃ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যসহ সবার মানবাধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়।
নেড প্রাইস আরো বলেন, কাউন্সিলর শোলে বৈঠকে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের ভয়াবহ নিপীড়নের মুখে জনগণের প্রতি জাতীয় ঐক্য সরকারের একাগ্রতা ও নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন। তিনি মিয়ানমারকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে তাঁদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন মার অং সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। আর ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ঐক্য সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক মন্ত্রী অং মিয়ো মিন, এ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অং কিয়াও মো, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. জাও ও এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মিয়ানমার ডেস্কের একজন কর্মকর্তা।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো তুন জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ক্ষমতা দখলকারী জান্তা সরকার তাঁকে প্রত্যাহার করে নতুন প্রতিনিধি মনোনয়ন দিলেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটি এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে মো তুন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আসিয়ানের একজন দূতের বরাত দিয়ে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকার শান্তি প্রতিষ্ঠার রূপরেখা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনে জান্তাপ্রধানকে আমন্ত্রণ নাও জানানো হতে পারে। এ বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে। চলতি মাসের শেষ দিকে আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা।
আসিয়ানের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত এরিওয়ান ইউসুফ গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত এপ্রিল মাসে আসিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে সম্মত হওয়া পাঁচ দফা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটার শামিল।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপর ১৬ এপ্রিল অং সান সু চিকে ছায়া স্টেট কাউন্সিলর করে অভ্যুত্থানবিরোধী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা মিলে জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেন। এটি নির্বাসিত সরকারের আদলে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ও বিদেশে কাজ করছে।
গত মঙ্গলবারই যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্র ফ্রান্সের সিনেট মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকারকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ওই প্রস্তাবে জাতীয় ঐক্য সরকারকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ফ্রান্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে প্রতিবেশী মালয়েশিয়াও বলেছে, জান্তা মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি করতে সহায়তা না করলে তারা জাতীয় ঐক্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।