মিশর ভ্রমণে মুগ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
প্রাচীন সভ্যতা ও ইসলামী সভ্যতার লীলাভূমি মিশরটাকে যেভাবে ঘুরে দেখলেন
গত ২২ শে ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৪ জন সিনিয়র কর্মকর্তাসহ এক সপ্তাহের মিশর সফরে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। ২৪শে ফেব্রুয়ারি মিশরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি জরুরি বৈঠকের সিডিউল থাকলেও বিশেষ কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সুযোগ এসে যায় প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মিশরটাকে একটু ঘুরে দেখার।
এদিকে মিশরস্থ বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত জনাব মনীরুল ইসলাম মন্ত্রী মহোদয়কে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিতে মনোনীত করেছিলেন আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি ছাত্র প্রতিনিধি জনাব শরীফ উদ্দিনকে। তিনিও একজন ভ্রমণ রসিক শিক্ষার্থী। আগমনের দ্বিতীয় দিনেই- ২৩ শে ফেব্রুয়ারি একদফা ঝটিকা ট্যুর হয়ে যায় ‘সুয়েজ খাল’ অঞ্চলে।
পরদিন কায়রোর ঐতিহ্যবাহি আল-আযহার মসজিদ ও হুসাইনি মসজিদ পরিদর্শন শেষে জনাব শরীফ উদ্দীন তাকে নিয়ে যান মিশরের এশীয় অংশে সিনাই মরুভূমি ও তুর পাহাড়ের পথে। সেখানে পরিদর্শন করানো হয় নবি সালেহ আ. ও নবি হারুন আ. এর সমাধি এবং আল-কুরআনে বর্ণিত সেই অভিশপ্ত সামেরির মাকামে। পরদিন ২৫ শে ফেব্রুয়ারি প্রশিদ্ধ পর্যটন স্পট শারম আল-শায়খ ভ্রমণ করে ফিরে আসেন কায়রো শহরে। পথিমধ্যে উয়ুনু মুসাও পরিদর্শন করে নেন।
বিকেলে কায়রো পৌঁছে কিছু সময় ছাত্র প্রতিনিধি জনাব শরীফ উদ্দীনের বাসায় বিশ্রাম নিয়ে শুরু হয় ভ্রমনের পরবর্তী পর্ব। এবারের গন্তব্য সুদান বর্ডারের নিকস্থ মিশরের দক্ষিণাঞ্চল আসওয়ান ও লুক্সুর। কায়রো বিমানবন্দর হতে বিমান যোগে রাত এগারটায় তারা পৌছেন ফরাও সভ্যতার ভূমি আসওয়ানে। এখানে নাইল ক্রজের শিপে পূর্বেই প্যাকেজ বুকিং ছিলো। এ প্যাকেজে রয়েছে ফাইভ স্টার মানের হোটেল সুবিধাসহ নীল নদে ভেসে ভেসে নীলের তীরে গড়ে উঠা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা পরিদর্শনের এক অনন্য আয়োজন।
এখানে সর্বপ্রথম পরিদর্শন করা হয় ‘আসওয়ান হাই ডেম’। এরপর ‘ফিলে টেম্পল’ সহ বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য পরিদর্শন শেষে নীলের বুক চিরে শিপ রওয়ানা হয় লুক্সরের পথে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে শিপ লুক্সর এসে পৌঁছে। সূর্যাস্তের পূর্বেই এখানকার প্রশিদ্ধ বেশকিছু টেম্পল ও যাদুঘর ঘুরে দেখা হয়। পরের দিনটি কাটে প্রাচীন স্থাপত্যে ঘেরা লুক্সর শহর পরিদর্শন ও টুকটাক কেনাকাটার মধ্য দিয়ে।
লুক্সরের সবোর্চ্চ আকর্ষণ ‘ওয়াদিউল মুলূক’। এটিই প্রাচীন ফারাও সম্রাটদের মূল সমাধিভূমি। প্রবহমান প্রাচীন নীল নদের অথৈ জলরাশি যে বন্যা সৃষ্টি করতো নিজেদের সম্রাটদের লাশকে সেই বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে প্রাচীন মিশরীয়রা পাহাড় বেষ্টিত এ উচ্চভূমিকে তাদের রাজাদের সমাধি হিসেবে গ্রহণ করেছিলো।
প্রত্নততত্ত্ববিধ ও ঐতিহাসিকদের গবেষণা অনুপাতে আল-কুরআনে বর্ণিত বিখ্যাত ফারাও সম্রাটদের এখানেই সমাহিত করা হয়েছিলো। ফারাও সম্রাজ্ঞী ‘হাটসেপসুট টেম্পল’ এসবের অন্যতম। মন্ত্রী মহোদয়ের ভ্রমণের শেষ দিনটি (২৮ শে ফেব্রুয়ারি) কাটে এ ওয়াদিউল মুলুকেই।
লুক্সুরের সবচেয়ে বড় টেম্পল ‘মা’বাদুল কারনাক’ও ঘুরে দেখা হয়। ছাত্র প্রতিনিধি জনাব শরীফ উদ্দীনের ভ্রমণ রুচিবোধ ও দক্ষতায় তিনি বরাবরই মুগ্ধ হন এবং তার ভূয়সী প্রশংসাও করেন।
২৮ তারিখ রাতে তিনি বিমানযোগে কায়রো ফিরে আসেন। পরদিন ভোরেই ছিলো মন্ত্রীমহোদয়ের ফিরতি ফ্লাইট। রাষ্ট্রদূত জনাব মনীরুল ইসলাম দূতাবাসের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে কায়রো অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নিয়ে আসেন। ১লা মার্চ ভোরে রাষ্ট্রদূত ও ছাত্র প্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় আনুষ্ঠানিক বিদায়।
মিশরীয় সভ্যতার হাজারো স্মৃতি নিয়ে বিকেল ৫ টায় তিনি অবতরণ করেন বাংলাদেশের মাটিতে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, মিশর ভ্রমণের সেই মুগ্ধ প্রহরগুলোর রেশ এখনো তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। গতকালও ফোন করে ছাত্র প্রতিনিধি জনাব শরীফ উদ্দীনকে এ অনুভুতির কথাই জানালেন !