নানা কর্মের মধ্যে মানুষ বিনোদন খোঁজে। কুরআন তেলাওয়াত, বইপড়া, খেলাধুলা, গানবাজনা, সিনেমা দেখা, নেশায় আসক্ত হওয়া, ভ্রমণকরা, বাগান করা ইত্যাদি।
সবকিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর এমনটি নয়। যেমন, বাচ্চাদের মোবাইলে গেম খেলা ওদের জন্য বিনোদন, আনন্দের খোরাক কিন্তু আসক্ত করে বিধায় অভিভাবকরা তা পছন্দ করেন না। সবকিছুর মাঝেই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক আছে। বিনোদন সব বয়সী নারী-পুরুষের জন্য প্রয়োজন। তবে বেশি উপভোগ করে শিশু-কিশোররা। ঘুরাঘুরি শিশু-কিশোরদের খুব পছন্দ।
বিনোদনের জন্য ক্লাবকেন্দ্রিক সংস্কৃতির দিন দিন প্রসার ঘটছে। অধিকাংশ ক্লাবগুলোয় চলে জুয়া, গানবাজনা ও নাচের আসর এবং নানাবিধ অশ্লীলতা। এর যতো প্রসার ঘটছে তত আমাদের পারিবারিক প্রশান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। আদম আ.-এর প্রশান্তির লক্ষ্যেই তাঁর জুড়ি হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে হাওয়া আ.-কে। নর ও নারীর মধ্যে আকর্ষণ আল্লাহর সৃষ্টি।
সকলের অধিকার সমুন্নত রাখা এবং বিশ্ব সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আল্লাহপাক সৃষ্টির শুরু থেকে নিয়ম-কানুন দান করেছেন। প্রশান্তির লক্ষ্যেই আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়ার মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করে দুজনকে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক নিয়ে জান্নাতে ইচ্ছামত (শুধু একটি নিষেধ) চলার সুযোগ দান করেন। বিয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের যে পরিবারপ্রথা গড়ে উঠে সত্যিকার বিনোদন সেখানেই রয়েছে।
একঘেয়েমি দূর করে একটু বিনোদনের লক্ষ্যেই আমরা সপরিবারে ঢাকা থেকে ১৫ ডিসেম্বর পটুয়াখালী বেয়াই বাড়ি ও কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। মেয়ে- জামাই, নাতি-নাতনি, ছোট বোন ও আমরা দুজন মিলে সময়গুলো বেশ আনন্দেই কাটলো। আলহামদু লিল্লাহ।
বেড়ানোটা তখনই আনন্দদায়ক হয় যখন সেটি হয় পারিবারিকভাবে এবং সেখানে থাকে শিশু-কিশোর। আমাদের আনন্দের খোরাক জমিয়েছিল দুই নাতি- নাতনি। সারাক্ষণ তারা ছিল আমাদের বিনোদনের সামগ্রী। অনেক ছবি আমাদের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করেছি।
চলার পথে গৌরনদী উপজেলাধীন আশোকাঠী ফিলিং স্টেশনের আতিথেয়তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশে এটি একটা বিরল ঘটনা। তাদের সকল সেবা ফ্রি। ফিলিং স্টেশনের সাথে রয়েছে গোসলখানা, অনেকগুলো বাথরুম, ওজুখানা, নামাজের জায়গা, সোফাসহ বিশ্রাম কক্ষ, পানি পানের ব্যবস্থা। সবকিছু ঝকঝকে ও পরিচ্ছন্ন। আমার আইডিতে সব ছবি রয়েছে।
বেয়াই-বেয়াইনের ছাদবাগান ও আতিথেয়তা সত্যই অতুলনীয়। পায়রা সেতু করার কারণে তাঁদের জমির একটি অংশ অধিগ্রহণ করায় বাড়ির পেছনের পুকুর ভরাট করে তিনতলা দৃষ্টিনন্দন নতুন বাড়ি করেছেন। রাতে ছাদবাগান ও সেখান থেকে পায়রা সেতুর ছবি উঠিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম।
গতকাল গিয়েছিলাম কুয়াকাটা। সেখানে হোটেল ওশানে অবস্থান ও তাদেরই মালিকানাধীন সিকদার রিসোর্টে সারি সারি ডুপ্লেক্স, সুইমিংপুল, লেক, কালভার্ট, খেজুর ও ফুলের বাগান সহজেই ভ্রমণপিপাসু জনতাকে আকর্ষণ করবে। রিসোর্টটি বেশ দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে।
শেষে আমরা যাই সমুদ্র সৈকতে। আমার নাতি-নাতনি সমুদ্রের পানিতে দাপাদাপি করা ও বালি নিয়ে খেলার জন্য আগে থেকে একটি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল একটি পাত্র ও চামুচ। তার মা চামুচসহ ব্যাগ ভুলে হোটেলে রেখে যাওয়ায় তার সে কী কান্না! চামুচ কিনে দেয়ার পর শান্ত হয়। বালি কেটে কেটে পাত্রভরা হলো তার খেলা। পানিতে নেমে কাপড়-চোপড় ভেজানোর পর আর বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হলো না। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে ফিরে আসলাম আমরা বেয়াই বাড়ি। আসার পথে পায়রা বন্দর ঘুরে আসলাম।
ভ্রমণের উদ্দেশ্য আল্লাহর সৃষ্টি ও তাঁর নিদর্শনাবলী অবলোকন করা। সমুদ্র আল্লাহর বিশাল ও অপরূপ সৃষ্টি। পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগ জল। সমুদ্র ও পাহাড়-পর্বতের বিশালত্ব আল্লাহকে অনুভব করতে শেখায়। এসব নিদর্শনাবলী দেখে মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ ও বিনয়াবনত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, মানুষ স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টিকে পূজা করে। সমুদ্রের গর্জন দেখে তাকেই বড় মনে করে সেখানে দুধ ঢালে, ডাব দেয় এবং মনস্কামনা পূরণের লক্ষ্যে সমুদ্রস্নান করে। অথচ এসবের যিনি স্রষ্টা তাঁকে ভুলে যায়।
ইসলামে সৃষ্টিপূজা ও ব্যক্তিপূজা নেই। নিরঙ্কুশ ভক্তি-শ্রদ্ধা-ভালোবাসা সবই আল্লাহর প্রাপ্য। নিজের মাথা নোয়াবে কেবল আল্লাহরই কাছে এবং সর্বদা মুখে উচ্চারিত হবে ‘আলহামদু লিল্লাহ’।
আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।