কিছু মুহূর্ত থাকে অবিশ্বাস্য যা কখনো ভুলার নয়। জীবনে এমন অনেক কিছু স্বপ্নের মত ঘটে যাবে, যা পরবর্তীতে মনে পড়লে অবিশ্বাস্যই মনে হবে। সফরটির নাম ছিল ‘শিক্ষা সফর’ ; তাই জানার ছিল অনেক কিছু, শেখার ছিল অনেক কিছু। কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের দেশ সভ্যতার বেলাভূমি মিসর।
মিসরের অন্যতম একটি উপভোগ্য স্থানের নাম সহারা মরুভূমি। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় ৯০০ কি.মি.দূরে লিবিয়া বর্ডারের খুব কাছাকাছি সাহারা মরুভূমি দিয়ে বেষ্টিত একটি ছোট্ট শহরের নাম ‘সিওয়া’। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অনেক আয়োজন রয়েছে এই শহরে৷ মিসরের ডেড-সিটি খ্যাত “মাল্লাহাত” রয়েছে এখানেই ৷ রয়েছে সুবিশাল ধু ধু সাহারা মরুভূমি। চোখের জ্যোতি দিয়ে যার কিনারা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব প্রায়। খুব কাছ থেকে এই মরু এলাকায় আরব বেদুইনদের জীবন যাত্রার প্রকৃত দৃশ্যের দেখা মেলে ৷
২৫ শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২১ ঈসায়ী ৷ দিনটি স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ৷ এখনো উপলব্ধি হচ্ছে সেই আনন্দঘন মুহূর্তগুলো। দুই দিন, তিন রাতের স্বপ্নীল এই ভ্রমনটি স্মৃতিপটের এক বিশাল জায়গা জুড়ে বিরাজ করছে। হয়তো ভুলাও যাবে না খুব সহজে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় ত্বাকির চত্বর থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। ভ্রমনটিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে ছিলেন মিসরে বাংলাদেশিদের প্রধান অভিভাবক মিশরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মহোদয়- জনাব মনিরুল ইসলাম স্যার।
রাতভর একটানা গাড়ি চলার পর সকালে সোনালী রোদের মিষ্টি আলোয় ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখি এক অন্য স্বপ্নের পৃথিবী। চারিদিকের সবকিছু যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। সিওয়া তার যৌবনের আদিম রুপ ঢেলে দিয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। এক অপূর্ব আমেজ নিয়ে শুরু হল আমাদের সিওয়া ভ্রমণ।
সকাল আটটার দিকে সিওয়াতে আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল রিসিভ করলাম ৷ ধু ধু মরু প্রান্তরের মাঝে চমৎকার একটি হোটেল ছিল ৷ হোটেলে ঢুকে সকালের নাস্তার জন্য শুকনো মিসরী কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম ৷ কিন্তু যখন নাস্তা সামনে এলো তখন সবাই চমকে গেলাম ৷ ডাল-রুটি আর বাঙ্গালী স্টাইলের গোস্ত ভুনা দেখে। মিশরের মাটিতে বাঙালি নাস্তা ! তাও নিজ বাসস্থান থেকে হাজার মাইল দূরে সিওয়ায় বসে! সত্যি অবিশ্বাস্য!!
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা গ্রহণ করে সকলেই দ্রুত ছুটলাম স্বপ্নের মিসরীয় ডেড-সি দেখার জন্য। এ এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি! মানুষ পানিতে ডুবে যাবে এটাইতো প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার এক অনন্য নিদর্শন দেখে আমরা সকলেই আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলাম। যা শুনেছিলাম সব কিছু সত্যতে রুপান্তরিত হতে শুরু করলো। একে একে সকেলই ডেড-সী তে সাঁতার কাটতে শুরু করলাম। বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে কোন দিন সাঁতার শেখেনি সেও নির্ভয়ে নেমে পরলো; কারণ এই পানিতে যে ডুবার কোনই সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তায়ালার এক অপূর্ব সৃষ্টি সকলেই মিলে দারুণ ভাবে উপভোগ করলাম৷ আলহামদুলিল্লাহ!
ভ্রমণের গল্পটা এখানে শেষ হতে পারতো, কিন্তু আমাদেরতো এই বিশ্বের অনেক কিছুই এখনো দেখার বাকি। সাহারা মরুভূমির দেশে এসেছি ৷ তা উপভোগ না করে কিভাবে সিওয়া ত্যাগ করবো? আর করলেও সিওয়ার কাছে হয়তো আমরা ঋনী হয়ে যাবো। তাই দুপুরে চমৎকার খাবার গ্রহণের পর বেরিয়ে পরলাম সহারা মরুর বুকে সাফারি উপভোগ করার জন্য।
কেউ কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি এতোটা উপভোগ্য হবে সাফারি। যার বর্ণনা এই কলামে লিখেও বুঝানো সম্ভব হবে না। বুঝার জন্য শুধু একটাই অপশন আর তা হলো জীবনে একবার হলেও সিওয়ার সাফারি করা। সাফারি উপভোগ করতে করতে মরুর মাঝপথে স্পেশাল “বেদুইন চা”, এ যেন এক বেদুইন জীবনে আপন করে নেওয়ার গল্প। পরক্ষণেই মরুর বালিতে মাগরিবের নামাজের সিজদা মনে করিয়ে দিয়েছে সাহাবায়ে কিরামদের একনিষ্ঠ ইবাদতের কথা। মরুর বুকে সিজদা দিয়ে যে সেই রবের আরো কাছাকাছির যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা।
সাফারি থেকে ফিরে দুম্বার কাবাব দিয়ে রাতের স্পেশাল খাবার হয়তো কখনোই ভুলার নয়। সিওয়ার বাজারে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হোটেলে ফেরা। আর মশার সাথে যুদ্ধ জয়ী এক শান্তির ঘুম। এ যেন স্বপ্নের একটি দিন কেটে গেলো নিমিষেই।
২৭ শে নভেম্বর, সকালে নাস্তা খেয়েই ছুটে চললাম মিসরীয় আরেকটি আশ্চর্যজনক সি-বীচ উপভোগ করতে। যা অবস্থিত মিসরের মারসা মাতরুহ নামক জেলায়। এই সী-বীচ এতোটাই আজব দেখতে, যার নামও প্রসিদ্ধি পেয়েছে ‘আজীবা’ নামে।কম্পিউটারে সী-বীচের ছবি যেন জীবনে বাস্তব হয়ে নেমে এলো। এতোটাই সুন্দর মারসা মাতরুর আজীবা সী-বীচ! আল্লাহ তায়ালার অপরুপ সৃষ্টি শুধু মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলাম। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বেলুন খেলা দিয়েছিল বাড়তি আনন্দ।
ফেরার পথে মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণকারী বিজয়ী বন্ধুরা।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয় স্যারের এবং আমেরিকা থেকে আগত সম্মানিত মেহমানদ্বয়ের। আরো কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি জনাব নূর নবী ভাইয়ের প্রতি, যার উপহারকৃত টি-শার্ট রেহলায় আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি সকল বড় ভাইদের ফ্যামিলির ও ইত্তেহাদের সকল সদস্য ভাইদের। আপনাদের একান্ত সহযোগিতায় আমরা স্মরণীয় একটি রেহলা উপহার দিতে পেরেছি৷ আলহামদুলিল্লাহ!
বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন ২০২১-২০২২ এর সিওয়া ওয়েসিস ও মারসা মাতরুহ স্টাডি ট্যুরটি অর্গানাইজেশনের স্মৃতির পাতায় অসামান্য অর্জন হিসেবে উল্লেখ থাকবে চিরকাল৷