এই প্রথম বার্সাকে ছাপিয়ে সব দুর্নাম ঘুচিয়ে ‘খুদে জাদুকর’ হয়ে উঠেছিলেন আর্জেন্টিনার। তাতেই সপ্তম ব্যালন ডি’অরের ট্রফি উঠল আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির হাতে।
এর আগের ছয় জয়ে ছিল বার্সেলোনা-রিদম। বরাবরই বার্সার জার্সিতে ফুটবল মাঠের সবুজ ক্যানভাসে গড়েছেন জাদুকরী কীর্তি। তাতেই রচিত হয়েছে কাতালান ফুটবল ক্লাবের শৌর্যবীর্যের ইতিহাস। দলের সাফল্যের রসায়নে তিনিই ছিলেন মূল কারিগর। বার্সার একেকটি শিরোপা যেন মেসি-ম্যাজিকের স্মারক হয়ে আছে। তাই বছর শেষে তাঁর ওই পারফরম্যান্সে পড়েছে ব্যালন ডি’অরের সিলমোহর। এভাবে বার্সেলোনার মেসির জয়জয়কারের গল্প খানিকটা কি একঘেয়ে লাগেনি!
সেই একঘেয়েমি কাটিয়ে এবার মেসি হাজির হয়েছেন কোপা আমেরিকার বৈচিত্র্য নিয়ে। গত জুলাইয়ে আর্জেন্টিনাকে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে তিনি হয়েছেন সত্যিকার আর্জেন্টাইন। সত্যিই ট্রফি ছাড়া আর্জেন্টাইনরা যেন তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মানতে পারছিল না! ৩৪ বছর বয়সে এসে সেটি উপহার দিয়েই লিওনেল মেসি পৌঁছেছেন সপ্তম স্বর্গে, ‘আর্জেন্টিনাকে নিয়ে এই বিজয় (কোপা আমেরিকা) স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। আমার মনে হচ্ছে, কোপা আমেরিকার জন্যই আমার হাতে এই ট্রফি। এ জন্য এটা (এই ব্যালন ডি’অর) আমার দলের সদস্যদের উৎসর্গ করছি।’ ২৮ বছর পর তাঁর নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার শিরোপা খরা ঘোচানোর পথে ৪ গোল করেছেন এবং করিয়েছেন ৫ গোল। কোপা আমেরিকার সেই আসরে তিনি সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন নেইমারের সঙ্গে। কোপা আমেরিকার গৌরবের পাশাপাশি বার্সার জার্সিতে আছে শুধু কোপা দেল রে ট্রফি। বাকিটা ঠিক সুরভিত বার্সেলোনার ইতিহাস নয়। দল হিসেবে কাতালান ক্লাবটি সুরভি ছড়াতে না পারলেও মেসি সর্বোচ্চ ৩০ গোল করে অষ্টমবারের মতো জিতেছেন পিচিচি ট্রফি। এসব ব্যক্তিগত অর্জনের সুবাদে ৬১৩ পয়েন্ট তিনি জিতেছেন ‘ফ্রান্স ফুটবল’-এর দেওয়া সেরার সম্মান।
৩৬ পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন রবার্ত লেভানদোভস্কি। এই পোলিশ তারকার দুর্ভাগ্য, কোপা আমেরিকার মতো বড় কোনো ট্রফি ছিল না এই বছর। নইলে মেসি ২০১৯ সালে সেরার পুরস্কারটাকেই নিজের শেষ ধরে নিয়েছিলেন। ৩৪ বছর বয়সী তারকার অবসর নিয়েও সরব হয়েছিলেন অনেকে। এবার সেই আলোচনা কি একটু থিতিয়ে যাবে! সে যা-ই হোক, পরশু ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে উঠেও পিএসজির এই মহাতারকার মনে পড়েছে পুরনো সেই স্মৃতি, ‘দুই বছর আগে মনে করেছিলাম, শেষ বছরের দিকে চলে এসেছি আমি। কিন্তু আমি আবার ফিরে এসেছি এই মঞ্চে।’ সপ্তমবারের মতো সেরার সম্মান পাওয়ার পরও তাঁর ভক্তরা তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। তাদের স্বপ্ন-রঙিন চোখ আরো একবার সেরার সম্মানের প্রত্যাশায় আছে!
ভক্তকুলের প্রত্যাশার শেষ নেই। তবে মানুষটা যখন লিওনেল মেসি, তাই সেই অসম্ভব সম্ভবের গল্পও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে পাঁচে রেখেই আর্জেন্টাইন মহাতারকা এগিয়ে গেছেন অনেকখানি। ২১ বছর পর বার্সেলোনার প্রেম পর্ব চুকিয়ে গেছেন পিএসজিতে, নতুন চ্যালেঞ্জে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে। প্রাণপণ চেষ্টা করছেন পিএসজির জার্সিতে। তবে এই মৌসুমে ১১ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪ গোল। মৌসুম অনেক বাকি থাকলেও এবার হয়তো তাঁকে নিয়ে বাজি ধরা যাবে না। আগামী মৌসুমে যদি সেই পুরনো বার্সেলোনার জাদু নিয়ে হাজির হন পিএসজিতে! এমবাপ্পে-নেইমারের সঙ্গে দারুণ তাল মিলে সেই জাদুকরী ছন্দ ফিরে পেলে আরেকবার বিস্মিত হবে ফুটবলবিশ্ব। এর চেয়েও বড় সম্ভাবনার জায়গা হলো কাতার বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা খারাপ খেলছে না, তারুণ্য-অভিজ্ঞতার মিশেলে দলটির শক্তিশালী চেহারা দাঁড়িয়েছে। এর মূলে কিন্তু ওই খুদে জাদুকর। তাঁকে ঘিরে খেলতে শিখে গেছে এই আর্জেন্টিনা। সুতরাং তাঁর নেতৃত্বে আকাশি-সাদায় বিশ্বকাপ রাঙালে সেই রং গিয়ে লাগবে ব্যালন ডি’অরেও। সুতরাং ম্যাজিশিয়ান যখন আছেন তখন ম্যাজিক হবেই।