অভিযোগ না হয় আছে, তাই বলে কাউকে না জানিয়ে মাঠে ঢুকে পড়বেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা! এরপর দুই পক্ষের খেলোয়াড়রাও ঘিরে ধরেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন লিওনেল মেসি ও নেইমার। দুই দলের খেলোয়াড়রাই হতভম্ব। বিতর্কের এক পর্যায়ে রেফারি আর্জেন্টিনা দলকে পাঠিয়ে দেন ড্রেসিংরুমে। মাঠে হানা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ব্রাজিলের জাতীয় স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এজেন্সির (আনভিসা) পরিচালক অ্যান্থোনিও বারা তোরেস বলেছেন, ‘আমরা আনভিসার নিয়ম মেনেই কাজটা করেছি। তাদের (আর্জেন্টিনার চার ফুটবলারকে) ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা সেটা মানেনি। তারা স্টেডিয়ামে গেছে, মাঠে ঢুকেছে; অর্থাৎ পদে পদে নিয়ম ভেঙেছে।’ একাদশে থাকা ওই তিনজনের বাইরে চতুর্থজন হলেন এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, তাঁর বিরুদ্ধেও আছে কোয়ারেন্টিন নিয়ম ভাঙার অভিযোগ। চার আর্জেন্টাইন খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে। কিন্তু গত ২৩ জুন ঘোষিত ব্রাজিল সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অ-ব্রাজিলিয়ানদের জন্য ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ব্রাজিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। নিয়মের পরও যাঁরা ছাড় পাবেন, তাঁদের অবশ্যই ব্রাজিলে ঢোকার সময় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
ম্যাচের তখন সপ্তম মিনিট। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সুপারক্লাসিকোয় আকাশই ভেঙে পড়ল তখন। অস্ত্রধারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন ব্রাজিলের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সংস্থার (আনভিসা) কর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, করোনার কারণে কোয়ারেন্টিন নীতি ভেঙে ব্রাজিলে এসেছেন চার আর্জেন্টাইন ফুটবলার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, ক্রিস্তিয়ান রোমেরো, জিওভান্নি লো সেলসো আর এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া। তাঁদের তিনজন ছিলেন আর্জেন্টিনার একাদশেও। তাই পণ্ড হয় যায় সুপারক্লাসিকো।
এভাবে আকর্ষণীয় একটি ম্যাচ স্থগিত হওয়ায় ব্রাজিলিয়ান জনপ্রিয় দৈনিক ল্যান্সের শিরোনাম ‘বৈশ্বিক কেলেঙ্কারি’। অব্রাজিলীয় কেউ ইংল্যান্ড থেকে ব্রাজিলে এলে থাকতে হয় ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে, চার আর্জেন্টাইন সেটা করেননি বলে অভিযোগ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর ছেলে ফ্লাভিয়ার, ‘আর্জেন্টাইনরা নোংরা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। ওরা জানত যে তারা ব্রাজিলের আইন ভেঙেছে।’ জনপ্রিয় অনলাইন ‘ইউওএল’ লিখেছে, ‘এই মহামারিতে ফুটবল নিয়ে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে আর্জেন্টাইন মিথ্যুকরা!’ তবে অভিযোগটা মানছেন না আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (আফা) প্রধান ক্লাউদিও তাপিয়া, ‘যা ঘটল সেটা ফুটবলের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। একটা স্বাস্থ্য আইন রয়েছে, যার অধীনেই খেলা হয় লাতিন টুর্নামেন্টগুলো। সব দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এটা অনুমোদন করেছে, যা আমরা পুরোপুরি মেনে চলেছি।’ ম্যাচ স্থগিত হওয়ার পর দ্রুত দেশেও ফিরে গেছেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। তাঁরা দেরি করলে অভিযুক্ত চার ফুটবলার গ্রেপ্তার হতে পারতেন বলে গুঞ্জন ব্রাজিলিয়ান মিডিয়ায়!
দায় যাঁরই হোক ম্যাচটি স্থগিত হয়েছে, এটাই বাস্তবতা। বিতর্ক এড়াতে ম্যাচের ফল নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি লাতিন অঞ্চলের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। ম্যাচটি যেহেতু বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সেহেতু সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে ফিফাকে। ফিফাও জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। এখন আইনটা কী? কনমেবলের শৃঙ্খলাবিধির ৭৪ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ‘ম্যাচ শুরু হয়ে গেলে ম্যাচ থামিয়ে খেলোয়াড়দের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না। এমনটি হলে যে দলের কারণে ম্যাচ থেমে যাবে সে দল ৩ পয়েন্ট হারাবে।’
কনমেবলের নিয়মে তাই ৩ পয়েন্ট পাওয়ার কথা আর্জেন্টিনার। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে এভারটনে খেলা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের টুইট, ‘আনভিসা ১ : ০ আর্জেন্টিনা’। তবে চাইলে ফিরতি ম্যাচও খেলাতে পারে ফিফা। তবে গোলডটকম জানিয়েছে, আর্জেন্টিনা করোনার নিয়ম ভাঙায় ৩ পয়েন্ট পেতে পারে ব্রাজিল। আর ফিফার প্রেসিডেন্ট জিওভান্নি ইনফান্তিনোর কাছে পুরো ব্যাপারটাই ‘পাগলাটে’।