Site icon World 24 News Network

আজ ভারতের সামনে বাংলাদেশ

সংগৃহীত

উল্লেখযোগ্য উঁচু কোনো স্থাপনা মানেই দড়ি বেয়ে এর মাথায় ওঠার ব্যবস্থা অস্ট্রেলিয়ায় থাকবেই! এভাবে সিডনির হার্বার ব্রিজের ওপরে ওঠার জন্য অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখেছি। এখানে এসে জানলাম, অ্যাডিলেইড ওভালের উঁচু ছাদে ওঠার জন্যও আগ্রহীর অভাব নেই কোনো। আগেও উঠেছেন, এমন দুঃসাহসীদের ছবি দিয়ে সাজানো একটি দেয়ালও আছে স্টেডিয়ামের ভেতরে। যাতে লেখা আছে, ‘রুফ ক্লাইম্ব ওয়াল অব ফেইম।’

এটির মতো প্রকাশ্য কিছু হবে না, তবে অ্যাডিলেইড ওভালে সাফল্যের অদৃশ্য এক দেয়াল লিখনও হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০১৫-র ওয়ানডে বিশ্বকাপে এখানেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে রচিত হয়েছিল প্রথমবারের মতো বিশ্ব আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার মতো মহাকাব্য। পরের সাত বছরে উত্থান-পতনের নানা বাঁক পেরিয়ে এখন টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, সেখানে আজ ভারত বাধা পেরিয়ে সেমিফাইনালের অঙ্ক মেলানোর পথে আরো এক ধাপ এগোনো যদিও কঠিনই। অনেকটা এই মাঠের নিচ থেকে দড়ি বেয়ে উচ্চতম বিন্দুতে পৌঁছানোর অ্যাডভেঞ্চারের মতোই। স্থানীয় সময় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) শুরু হতে যাওয়া ম্যাচের আগে রোহিত শর্মা আর সাকিব আল হাসানদের শক্তির ব্যবধানটা এমনই। ভারতীয় দলের ব্যাটিং লাইন যখন বারুদ ঠাসা, তখন বাংলাদেশের কারো ব্যাটে সেই আগুনটা নেই। এই সংস্করণের চাহিদা মেনে বড় বড় শট খেলার মতো ব্যাটার না থাকলেও ইদানীং পেস বোলাররা ক্রমেই আরো কার্যকরী হয়ে উঠছেন। ভারত ম্যাচে সেটিও যে বাংলাদেশের স্বপ্নে রং ছড়াবে না, কে তা বলতে পারে!

অথচ মেলবোর্নে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে রোহিত শর্মার বিপক্ষে রুবেল হোসেনের সেই আলোচিত নো বলকাণ্ড পরের বেশ কয়েক বছর এই দুই দলের লড়াইয়ের আবহ উত্তপ্তই করে রাখত। সেখানেই না থেমে মাঠের পারফরম্যান্সেও সেই উত্তাপের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে ছাড়তেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। একই বছর দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পরেও অনেকবার ভারতের মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পেরেছিল তারা। দেশের মাটিতে ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ, ২০১৮-তে কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফি এবং একই বছর দুবাইতে ওয়ানডে এশিয়া কাপের ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হওয়াটা যেন ক্রিকেটের নতুন এক লড়াইয়ের বিজ্ঞাপনই হয়ে উঠতে চলেছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিশেষত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ব্যর্থতায় আবহ এখন অনেকটা অ্যাডিলেইড ওভালের সামনে দিয়ে নিঃশব্দে বয়ে চলা টরেন্স নদীর মতোই।

দুই জয়ের প্রেরণা নিয়ে আজ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে অবশ্য অনুশীলন করেননি বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। তবে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ছবি : বিসিবি

সাকিব আল হাসানও ম্যাচপূর্ব পরিস্থিতি জমিয়ে দিতে আগ্রহী হলেন না কিছুতেই। এই দুই দলের লড়াইয়ের নেতিয়ে পড়া বারুদ আবার সক্রিয় হয়ে জ্বলবে কি না, এমন জিজ্ঞাসার জবাবে কী বললেন শুনুন, ‘ভালো একটি ম্যাচ হলে অবশ্যই দর্শকদের জন্য ভালো। (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে) শেষ ম্যাচটিও বিশেষ করে দর্শকদের জন্য ভালো ছিল। ও রকমই একটি ভালো ম্যাচ উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি। ’

আসর শুরুর আগে অবশ্য এই অলরাউন্ডার বলেছিলেন, এমন কিছু করতে চান, যা এর আগে বাংলাদেশ কোনো বিশ্বকাপে করেননি; কিন্তু সেই স্বপ্নের সীমা কতটুকু বিস্তৃত ছিল, সেটি জানা গেল গতকাল ভারত ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেই। কেউ একজন সেরা বিশ্বকাপ নিয়ে তাঁর কথা সূত্র ধরিয়ে দিতে না দিতেই বলে ফেললেন, ‘ওটা এরই মধ্যে হয়ে গেছে আমাদের। ’ সেখানেই তাহলে থেমে যাবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা?

সাকিব সচেতনেই হয়তো আশার বাণী শোনাতে চাইলেন না তেমন। এই ম্যাচের আগে সতীর্থদের ওপর চাপ বাড়াতে চান না বলেই কিনা শোনালেন এ রকম, ‘পরবর্তী লক্ষ্য হলো দুটি ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটি ম্যাচের (আরেকটি পাকিস্তানের বিপক্ষে) কোনো একটিও যদি জিততে পারি, সেটি অঘটন হিসেবেই গণ্য হবে। সেই অঘটন ঘটাতে পারলে আমরা খুশি হবো। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই। দুই দলই কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে ভালো। ’

কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অনিশ্চিত চরিত্রটা কালকের অ্যাডিলেইডের আবহওয়ার মতোই। এই রোদ তো, এই বৃষ্টি। বিকেলে বিরাট কোহলিসহ ভারতীয় ক্রিকেটারদের একাংশ ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসার সময় রোদ ঝলমলে আকাশ; কিন্তু অনুশীলনে নামতে না নামতেই ঝুমবৃষ্টি। অ্যাডিলেইডের আবহাওয়া সারা দিনই এ রকম নিয়ম করে হাসল আর কাঁদলো। রাহুল দ্রাবিড়ও এই সংস্করণে আগাম জয়ের হাসি হাসার নিশ্চয়তা খুঁজে পেলেন না একটুও। সাকিবের ‘অঘটন’ প্রসঙ্গ তোলা হলে ভারতীয় দলের হেড কোচ বললেন, ‘আমরা ওদের সমীহই করি। তা ছাড়া এই বিশ্বকাপ আমাদের দেখিয়েছেও যে কোনো দলকেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডও তা দেখিয়েছে আমাদের। ’

সাকিব নিজেও দিচ্ছেন সেই উদাহরণই, ‘যদি ভালো খেলি, দিনটি যদি আমাদের হয়, তাহলে কেন পারব না? এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। সুতরাং ও রকম একটি ফল হলে অবশ্যই আমরা খুশি হব। ’ পরক্ষণেই আবার এই ম্যাচের উত্তাপ সতীর্থদের গায়ে লাগতে না দেওয়ার সচেতনতাও, ‘ভারত ফেভারিট। তারা এখানে বিশ্বকাপ জিততে এসেছে। আমরা ফেভারিটও নই, বিশ্বকাপ জিততেও এখানে আসিনি। আমরা জানি যে ভারতের বিপক্ষে জিতলে সেটি অঘটনই হবে। সেরা খেলা খেলে সেই অঘটনই ঘটানোর চেষ্টা থাকবে আমাদের। ’ এই সংস্করণে তেমন কিছু ঘটানো কখনো কখনো মাত্র দুটি বিগ হিটেরই ব্যাপার। কে বলছেন এই কথা? রাহুল দ্রাবিড়, ‘এই সংস্করণে বেশির ভাগ সময়ই জেতা-হারার ব্যবধানটা ১২-১৫ রানের হয়। এটি তো মাত্র দুটি শটেরই মামলা। ’

অ্যাডিলেইডে পুরনো সাফল্যের মহামঞ্চে তেমন কোনো সমীকরণ সামনে এলে কি মেলাতে পারবে বাংলাদেশ? পারলে দড়ি বেয়ে স্টেডিয়ামের ছাদে ওঠার মতো প্রতীকী অ্যাডভেঞ্চারও সফল হয়!

Exit mobile version