Site icon World 24 News Network

মাহমুদ উল্লাহদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে নাকি হবে বিড়ম্বনার!

দুবাই শুধুই ভাগ্য বদলানোর শহর নয়, ভাগ্যবিড়ম্বনারও। আলো ঝলমলে পৃথিবীর নিচে ঘাপটি মেরে থাকা অন্ধকারের শহরও এটি। এই আলো আর অন্ধকারের গল্পে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশিরাও। যুগ যুগ ধরেই এখানে ভাগ্য বদলাতে আসা অনেকের করুণ পরিণতিও নিয়মিতই খবরের শিরোনাম হয়ে এসেছে। এখানে আকাশচুম্বী ভবন থেকে পড়ে গিয়ে থেমেছে অজ্ঞাতপরিচয় বাংলাদেশি শ্রমিকের জীবনও। আবার দারিদ্র্যের চোখ-রাঙানি দেখে দেশছাড়া অনেক শ্রমিকের জীবনও বদলে দিয়েছে এই শহর।

নতুন কোনো উৎসবের উপলক্ষ তৈরির আগে তাঁরা উঠেছেনও উৎসবের নগরীতেই। যদিও সুপার টুয়েলভ নামের মূল পর্বে ৪ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচটিই শুধু তাঁরা খেলবেন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এর আগে গ্রুপ ওয়ানের চারটি ম্যাচই তাঁরা খেলবেন আবুধাবি ও শারজায় গিয়ে। দুই ভেন্যুতে দুটি করে ম্যাচ। সেগুলো তাঁরা দুবাই থেকে যাওয়া-আসা করেই খেলবেন। এখানে তাঁদের ঠিকানা যে ক্রাউন প্লাজা হোটেল, সেটির অবস্থান উৎসবের নগরী ফেস্টিভাল সিটিতেই।

যে সিটি তিন বছর আগে বাংলাদেশ দলের চূড়ান্ত সাফল্যের উৎসব দেখতে দেখতেও দেখেনি। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের সময় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল ছিল এই ফেস্টিভাল সিটিরই ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। ওই আসরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে ফাইনাল খেলা বাংলাদেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষ ওভারে গিয়ে হেরেছিল ভারতের কাছে। যদিও পরের কয়েক বছরে আরো অনেক জয় দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেটি কি ওয়ানডে, কি টি-টোয়েন্টিতে। কিন্তু কুড়ি-বিশের বিশ্ব আসর ২০১৬-র পর আর হয়নি বলে এই সংস্করণের বিশ্বকাপে নিজেদের পেশি কতটা শক্তিশালী, মূল পর্বে জিতে অন্তত সেই সামর্থ্যের জানান দেওয়া যায়নি।

পাঁচ বছর পর আবার সেই সুযোগ এসে উপস্থিত। ওমানের মাসকাটে হওয়া প্রথম পর্বে স্কটল্যান্ডের কাছে ধাক্কা খাওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়ে সুপার টুয়েলভ পর্ব নিশ্চিত করা গেছে। এখানে গ্রুপ ওয়ানে আরেকটি সুবিধার দিক হলো আইসিসির কোনো সহযোগী সদস্য দেশও নেই। এ রকম কোনো দল থাকলে সেটি মাহমুদ উল্লাহদের জন্য কতটা চাপের ম্যাচ হয়, সেটি তো আল আমরাত স্টেডিয়ামে স্কটিশরাই দেখিয়ে দিয়েছে। ওমান ম্যাচেও একটা সময় পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য ঝুলে ছিল। তুলনায় অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সহজ প্রতিপক্ষই—এই অর্থে যে হারানোর কিছু নেই; কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক।

বড় কিছু পাওয়ার লক্ষ্যে পুরো দলকে একতাবদ্ধও করেছে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি। স্কটল্যান্ডের কাছে হারার পর ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি ব্যক্তি আক্রমণেও আহত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তাই সংবাদমাধ্যমের সামনেও হাসিখুশি নন। বিশেষ করে বোর্ড সভাপতির বক্তব্যে তাঁদের ভেতরটাও উত্তাল হয়ে আছে বলেই খবর। সেটিকে উত্তাল সাফল্য স্রোতে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যও স্থির করেছেন নিশ্চয়ই। বাকিটুকু জানাবে সময়।

যা একই সঙ্গে জীবন বদলাতে এসে হোঁচট খাওয়ারও। হয় বদলেছে, নয়তো মুখ থুবড়ে পড়েছে। মাসকাট থেকে গতকাল বিকেলে দুবাইয়ে উড়ে আসা বাংলাদেশ দলের সামনেও এখন সেই দুটি সম্ভাবনাই। হয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভাগ্য বদলানোর, নয়তো বরাবরের মতোই ভাগ্যবিড়ম্বনার। সেই যে ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টির প্রথম বিশ্ব আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেওয়া অভিষেক হয়েছিল, পরের পাঁচটি আসরে মূল পর্বে জয় নেই আর একটিও। এবার সেই জয়ের খোঁজেই দুবাইয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন মাহমুদ উল্লাহরা।

দুবাইয়ে ভাগ্যান্বেষণে আসা বাংলাদেশিদের মতো মাহমুদ উল্লাহদেরও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভাগ্যের চাকা ঘুরবে নাকি বরাবরের মতোই হবে বিড়ম্বনার!

Exit mobile version