জুলুমের পরিণতি জাহান্নাম
'আপনার রব কখনো তাঁর বান্দার ওপর জুলুম করেন না'- সুরা হা-মীম আস সাজদাহ ৪৬।
আল্লাহপাক নিজে যেমন তাঁর বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না, তেমনি কেউ জুলুম করবে সেটিও সহ্য করেন না। জালেমের ধ্বংস অনিবার্য, দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনই তার ঠিকানা। তাঁর সাবধান বাণী, ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে’ – সুরা হুমাযাহ্। এই সুরাতেই বলা হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে হুতামা এবং হুতামার পরিচয়ে আল্লাহর চরম ক্রোধ প্রকাশ করে বলেছেন, সেটি আল্লাহর আগুন, প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। একটু গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচারের শাস্তি যদি এমন হয় তাহলে যারা গুম-খুন ও মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের পরিণতি কী হতে পারে? বুঝতে হবে, আল্লাহর বান্দাদের সাথে অসদাচরণ, দুর্ব্যবহার স্বয়ং আল্লাহরই সাথে করা। কারণ মানুষ আল্লাহরই প্রতিনিধি।
জুলুমের পরিণতি নিয়ে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য কথা রয়েছে। বহুল প্রচলিত হাদিস, ‘ঐ ব্যক্তি মোমিন নয়, মোমিন নয়, মোমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়।’ ইতিবাচক কথা, ‘জমিনে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ করো তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন।’
সাধারণভাবে মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারের চেয়ে ঈমানদারদের সাথে দুর্ব্যবহার আরো ভয়ংকর। আল্লাহর বাণী, ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি।’ ঈমানদারদের সাথে শত্রুতা মূলত আল্লাহরই সাথেই শত্রুতা।
মানুষের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মানুষ সৃষ্টি করেছে রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা। একটি রাষ্ট্র ও সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো তার নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান ও দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। পৃথিবীতে অনেক স্বৈরশাসকের উদাহরণ রয়েছে যারা জনগণের নিরাপত্তা বিধানের পরিবর্তে জুলুম করেছে। নমরুদ, ফেরাউন, হিটলার, মুসোলিনি জুলুম নির্যাতনের কারণে ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এসব জালেম ও তাদের সহযোগী দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। পক্ষান্তরে কেয়ামতের ভয়ংকর দিনে ন্যায়পরায়ণ শাসককে আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অতি উচ্চে। রসুলল্লাহ সা. বলেছেন, দুটি চোখ জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হবে না। এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ থেকে অশ্রু ঝরে, দুই. জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে যে চোখ বিনিদ্র রজনী যাপন করে। কত বড় সৌভাগ্যবান তারা! সততার সাথে জীবন যাপনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জান্নাতের গ্যারান্টি নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হচ্ছে।
আল্লাহর রসুল সা. বলেছেন, হতদরিদ্র ব্যক্তি সেই যে মানুষের প্রতি জুলুম করে। কেয়ামতের দিন মজলুমের পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে সে নিঃস্ব হয়ে যাবে। বরং মজলুমের গুনাহ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। পক্ষান্তরে মজলুম গুনাহ ঝেড়ে ফেলে ও জালেমের নেকি ও নিজের নেকি নিয়ে মহা আনন্দে জান্নাতে যাবে। সব মজলুম (যদি ঈমানদার হয়) ইনশা-আল্লাহ জান্নাতে আশ্রয় পাবে। পৃথিবীতে জুলুমের মোকাবেলায় মজলুমের উচিত ধৈর্য ধারণা করা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা মানুষের ক্ষতি করছে, জুলুম নির্যাতনের মাধ্যমে মানুষকে অতিষ্ট করে তুলছে তাদের কি জাহান্নাম থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই? কুরআন হাদিস বলে, সাধারণত কোনো উপায় নেই। তবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। সুরা বুরুজে -আয়াত ১০- জালেমের পরিণতি জাহান্নাম বলতে গিয়ে আল্লাহ বলেছেন, অতঃপর তওবা না করে। এই বাক্যের মধ্যে একটু ক্ষীণ আশা রয়েছে। তাই জালেম যদি খাঁটি মনে তওবা করে এবং সাধ্যমত মজলুমের পাওনা পরিশোধ / ক্ষমা চেয়ে নিতে পারে/ সারাজীবন মজলুমের জন্য দোয়া করতে থাকে হয়তো-বা আল্লাহ তার ওপর দয়াপরবশ হয়ে মজলুমকে তাঁর পক্ষ থেকে এতো পরিমাণ দেবেন যে, মজলুম খুশি হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিবে।
হে আল্লাহ! সবধরনের জুলুম থেকে তুমি আমাদের হেফাজত করো।