আল্লাহর প্রতিশোধ
‘এই কাফেরদের সামান্য কিছুক্ষণের জন্য তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও’- আত তারিক ১৭।
- সুরা আত তারিক পড়ছিলাম এবং সুরার শেষ বাক্যটি দৃষ্টি কাড়লো। মক্কি সুরা। পৃথিবীর সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ও আরবের শ্রেষ্ঠতম বংশের মানুষটি (মুহাম্মদ সা.) ইসলামের দাওয়াত দানের সাথে সাথে তাঁর জাতির লোকেরা ভয়ঙ্কর শত্রুতে পরিণত হয়ে পড়লো। এই শত্রুতা ছিল একপক্ষীয়। আল্লাহর রসুল সা. তাদেরকে শত্রু মনে করতেন না বরং সব সময়ই তাদের হেদায়াত ও কল্যাণ চাইতেন। এক তরফা তিনি ও তাঁর সাথিরা মার খেয়েছেনে, নানা নিন্দাবাদে জর্জরিত হয়েছেন। পাল্টা দেয়ার কোনো ক্ষমতা নেই এবং দেননি ও সাথিদেরও দিতে দেননি। এমতাবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে এ বাক্যটি ছিল নবি সা.-এর জন্য সান্ত্বনা ও কাফেরদের প্রতি ধমক।
নমরুদ, ফেরাউনও ইবরাহিম আ. ও মুসা আ.-এর সাথে এমনই আচরণ করেছিল। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কোনো সুযোগ রেখেছিল না। এমতাবস্থায় আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল জালেমের টুটি চেপে ধরার এবং জালেমদের সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেনও।
এখানেও নবি মুহাম্মদ সা.-কে বিরোধীতার জবাব না দিয়ে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার কথা বলার পাশাপাশি কাফিরদের দেখ-ভালের বিষয়টি তাঁর ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছেন। ইতিহাসের সাক্ষ্য মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে আবু জেহেল-আবু লাহাবদের সকল দর্প চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। সকল বাধা-বিপত্তি মাড়িয়ে আজকের মজলুমরা যদি ইমান ও নেক আমলে সজ্জিত হতে পারে, অবশ্যম্ভাবী আল্লাহপাক তাদের এ অবস্থার পরিবর্তন করে দিবেন। এটি আল্লাহপাকের ওয়াদা এবং এটিই তাঁর প্রতিশোধ। আর আল্লাহ কখনই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
পরকালের বিষয়টি তো রয়েছেই। কুরআন-হাদিস পড়ে আমার উপলব্ধি- জালেমের জন্য জান্নাতে এক ইঞ্চি জায়গাও বরাদ্দ নেই (যদি তওবা না করে)। আর মজলুম যদি ইমানদার হয় তাহলে তার সকল গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সে জান্নাতে যাবে (হাদিসের ভাষ্য)।
বর্তমান বিশ্বে দেশে দেশে ইসলামের দুশমনরা ইমানদার জনগোষ্ঠীর উপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। হক ও বাতিলের এ দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম চিরন্তন। নমরুদ- ফেরাউন-আবু জেহেল-আবু লাহাবদের উত্তরসূরী বনাম ইবরাহিম আ, মুসা আ. ও মুহাম্মদ সা.-এর অনুসারীদের লড়াই-সংগ্রামকে এড়িয়ে চলা প্রকৃত সত্যকেই অস্বীকার করার নামান্তর। আমি মনে করি এমন পরিস্থিতিতে ইমানদারদের উচিত কেবল ইতিবাচক কাজ করা এবং বদলা গ্রহণের বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে পেরেশানিমুক্ত হওয়া। কীভাবে বদলা নেবেন আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহপাক ইমানদারদের হেফাজত করুন।