হতাশ হৃদয়ে আশার আলো
মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব, এইজন্য আল্লাহর দয়া মানুষের উপর অপরিসীম, কিন্তু যেই মানুষকে আল্লাহ এত ভালোবাসেন সেই মানুষ কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার পক্ষ থেকে নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করে?
সহজে বললে কিছু মানুষ করে আর কিছু মানুষ করে না এটাই উত্তর হবে স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু মানুষ কেন মহান আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করে না এর বিভিন্ন দিক রয়েছে, যেমন- প্রথমতঃ যারা ধর্মীয় দিক দিয়ে ইসলাম ধর্মের বাহিরে তারা পালন করে না, এবং না করা স্বাভাবিক তাদের জন্য । দ্বিতীয়তঃ যারা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ইসলাম ধর্মের অনুসারী, কিন্তু তারা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে অনেক দূরে রয়েছে, এর ফলে সে মহান আল্লাহর নির্দেশিত দায়িত্ব পালনে সে বিমুখ । তৃতীয়তঃ যারা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ইসলাম ধর্মের অনুসারী, তবে তাদের ধর্মীয় জ্ঞান রয়েছে, এই জ্ঞানের কারণে তারা আল্লাহর দায়িত্ব পালন করতে করতে মাঝেমধ্যে বিমুখ হয়ে যায় ; ফলে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এই ভেবে যে, মহান আল্লাহ কি তাদের ক্ষমা করবেন ?
সর্বোপরি যারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্য করে পবিত্র কুরআন এ বর্ননা করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
বলুন, “হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” । (সুরা যুমার, আয়াতঃ৫৩)
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রতি কত দয়ালু মানুষ তার অন্তরচক্ষু দিয়ে দেখলে বুঝতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ ! আল্লাহ তায়ালা সবসময় চান তার বান্দা যতই অন্যায়, অবিচার, জুলুম বা পাপ কাজ করুক না কেন একাগ্রচিত্তে যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ সেই বান্দাকে মুহুর্তেই ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আসুন দেখি বিজ্ঞান কি বলেঃ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ্য পুরুষ একবার সহবাস করলে যে পরিমান বীর্য নির্গত হয় তাতে ২০ কোটি শুক্রাণু থাকে। তো, লজিক অনুযায়ি মেয়েদের গর্ভে যদি সেই পরিমান শুক্রানু স্থান পেতো তাহলে ২০ কোটি বাচ্চা তৈরি হতো ! এই ২০ কোটি শুক্রাণু , মায়ের জরায়ুর দিকে পাগলের মত ছুটতে থাকে, জীবিত থাকে মাত্র ৩০০-৫০০ শুক্রাণু ।
আর বাকিরা ? এই ছুটে চলার পথে ক্লান্ত অথবা পরাজিত হয়ে মারা যায়। এই ৩০০-৫০০ শুক্রাণু , যেগুলো ডিম্বানুর কাছে যেতে পেরেছে। তাদের মধ্যে মাত্র একটি মহা শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বানুকে ফার্টিলাইজ করে, অথবা ডিম্বানুতে আসন গ্রহন করে। সেই ভাগ্যবান শুক্রাণুটি হচ্ছে আপনি কিংবা আমি, অথবা আমরা সবাই।
কখনও কি এই মহাযুদ্ধের কথা মাথায় এনেছেন?
১। আপনি যখন দৌড় দিয়েছিলেন” তখন ছিলনা কোন চোঁখ হাত পা মাথা, তখনো মহান আল্লাহ আপনাকে দয়া করেছিলেন।
২। আপনি যখন দৌড় দিয়েছিলেন আপনার ছিলোনা কোন মস্তিষ্ক তখনো মহান আল্লাহ আপনাকে দয়া করেছিলেন।
৩। আপনি যখন দৌড় দিয়েছিলেন তখন আপনার ছিলনা কোন শিক্ষা, কেউ সাহায্য করেনি, তখনো মহান আল্লাহ আপনাকে দয়া করেছিলেন।
৪। আপনি যখন দৌড় দিয়েছিলেন তখন আপনার একটি গন্তব্য ছিলো এবং সেই গন্তব্যের দিকে দৌড় দিয়েছিলেন তখনো মহান আল্লাহ আপনাকে দয়া করেছিলেন।
– এরপর, বহু বাচ্চা মায়ের পেটেই নষ্ট হয়ে যায় । কিন্তু আপনি মারা যাননি, প্রায় ১০ টি মাস পূর্ণ করতে পেরেছেন, সেটাও আল্লাহর দয়া।
– বহু বাচ্চা জন্মের সময় মারা যায় কিন্তু আপনি টিকেছিলেন ।
– বহু বাচ্চা জন্মের প্রথম ৫ বছরেই মারা যায়। আপনি এখনো বেঁচে আছেন ।
– অনেক শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়। আপনার কিছুই হয় নি ।
– বড় হওয়ার পথে অনেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, আপনি এখনো আছেন ।
আর আজ আপনি নিরাশ হয়ে পড়েন, কিন্তু কেন ? কেনো ভাবছেন আপনি হেরে গিয়েছেন ? কেন আপনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন ? আপনি আবার ফিরে আসুন সেই আল্লাহর দিকে যিনি আপনার প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন যিনি আপনাকে কখনো ঠকান না , যিনি আপনাকে কখনো ফেরত দেন না কিছু চাইলে, যিনি আপনার হতাশাকে আশার আলোতে পরিনত করেন।জীবনের প্রথম দিনে যিনি দয়া শুরু করেছেন। ২০ কোটি শুক্রাণুর সাথে মোকাবিলায় আপনার প্রতি দয়া করে, আপনাকে বাচিঁয়ে রাখলেন যিনি তিনি কি আপনার প্রতি এখনো দয়া করতে পারেন না?
তাহলে কেনো বলেন আমি হেরে গিয়েছি ? তাহলে কেন এত হতাশ হয়ে পড়েন ?
এমন হাজারো এমন হাজারো হতাশা আপনাকে ঘিরে থাকবে কিন্তু আপনি কেনো হতাশ হয়ে পড়বেন ?
আপনি কেন হারবেন ? নিজেকে সময় দিন, আল্লাহকে স্মরণ করুন । আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন , আপনার হতাশা থেকে পরিত্রাণের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন ! দেখবেন আপনি মুক্তি পেয়ে যাবেন। আল্লাহ বলেন :
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত ও হয়ো না ; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও । (সুরা আল ইমরান, আয়াতঃ ১৩৯)
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করে আমরা যেন পরপারে চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত পেতে পারি মহান আল্লাহর কাছে সেই কামনা করি।