‘ইসলামী সমাজ বিনির্মানের ধারা’ গ্রন্থে বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী লেখক ও সাহিত্যিক সাইয়েদ কুতুব শহীদ রাহঃ উল্লেখ করেন, আজ নয়া নেতৃত্বের প্রয়োজন। মানবজাতি নতুন নেতৃত্ব চায়। পাশ্চাত্যের নেতৃত্ব আজ ক্ষয়িষ্ণু।
এর কারণ, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বস্তুগত দারিদ্রতা অথবা আর্থিক ও সামরিক শক্তির দুর্বলতা নয়। পাশ্চাত্য জগত মানবজাতির নেতৃত্বের জায়গা এ জন্যে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে যে, জীবনী শক্তি সঞ্চারকারী যেসব মৌলিক গুণাবলী তাকে একদিন নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠত করছিল, সেসব গুণ আজ তার কাছে নেই।
অনাগত দিনের নতুন নেতৃত্বকে ইউরোপের সৃজনশীল প্রতিভার অবদানগুলোকে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের সাথে সাথে মানবজাতির সামনে এমন এক মহান আদর্শ ও মূল্যবোধ পেশ করতে হবে, যা আজ পর্যন্ত অনাবিস্কৃতই রয়ে গেছে। আর ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে মানবজাতির সামনে একটি ইতিবাচক, গঠনমূলক ও বাস্তব জীবন বিধান পেশ করতে হবে, যা মানব স্বভাবের সাথে সস্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যশীল।
একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থাই উল্লেখিত মূল্যবোধ ও জীবন বিধান দান করতে সক্ষম। বিজ্ঞানের প্রতাপও শেষ হয়ে এসেছে। ষোলশো শতকে যে রেনেসা আন্দোলন সূচিত হয়ে আঠারো ও উনিশ শতকে বিজয়ের উঁচু শিখরে পৌছে গিয়েছিল, তা আজ নিস্প্রভ হয়ে পুনরুজ্জীবন শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
আধুনিক যুগে যেসব জাতীয়তাবাদী ও উগ্র স্বাদেশিকতাবাদী মতবাদ জন্ম নিয়েছে এবং এগুলোকে ভিত্তি করে যেসব আন্দোলন ও জীবনযাত্রা প্রণালি গড়ে উঠেছে, সবগুলোই আজ নির্জীব হয়ে পড়েছে। সংক্ষেপে বলতে হয়, মানুষের তৈরী সকল জীবন বিধানই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এ নাজুক ও বিভ্রান্তিকর ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম ও মুসলিম সমাজের নিজ দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে। ইসলাম কখনো সৃষ্টজগতকে বস্তুসম্ভার আবিস্কারে বাধা দেয়নি।
আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে খিলাফতের দায়িত্বসহ প্রেরণের সময়ই মানবজাতিকে সৎপথ দেখানোর দায়িত্ব পালনকে কয়েকটি শর্তাধীনে আল্লাহর ইবাদত বলেই ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয়, এটাই মানুষের সৃষ্টির উদ্দেশ্য বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন। আর তোমার প্রতিপালক এয সময় ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি ধরাপৃষ্ঠে আমার খলীফা প্রেরণ করতে যাচ্ছি।-আল বাকারা: ৩০
আর জ্বিন ও মানবজাতিকে আমি আমি আমার বন্দেগী ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি। – আয যারিয়াত: ৫৬
এতো গেল খিলাফত ও বন্দেগীর কথা। কিন্তু সাথে সাথে মানবজাতির প্রতি আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর যে দায়িত্ব পালনের ভার দিয়েছেন, তাও পূরণ করার সময় এসেছে। এভাবে তোমাদেরকে মধ্যবর্তী উম্মাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি যেন তোমরা মানবজাতির প্রতি স্বাক্ষী হতে পার এবং রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী থাকতে পারেন। — আল বাকারা:১৪৩
তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মাত, মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্যেই তোমাদের উত্থান। তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে এবং আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাসী হবে। আলে ইমরান:১১০