আমরা ফেসবুকে যারা সক্রিয় তারা প্রতিনিয়তই মৃত্যুর খবর পাই এবং পড়ি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন। এই ইন্না লিল্লাহ — উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আমাদের মৃত্যুর কথাই স্মরণ করি। আমরা নিকট থেকে প্রিয়জনকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখছি, জানাযায় শরীক হচ্ছি, লাশ বহন করে নিয়ে যাচ্ছি, কবরস্থ করছি।
এমন মুহূর্ত আমার জীবনেও আসবে এবং সবকিছু রেখে শূন্য হাতে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এমন উপলব্ধি একটি মুহূর্তের জন্যও আসছে না- আমাদের জন্য এটি বড়ই দুর্ভাগ্য। আল্লাহর বান্দাদের বিভ্রান্ত করার জন্য শয়তান যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল, বলা যায় সে অনেকখানি সফল।
আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য তিনি মানুষকে নানাবিধ বিপদ-আপদ দান করেন। কিন্তু মানুষের চেতনা নেই। করোনায় ৫২ লক্ষাধিক মানুষ স্বল্প সময়ের মধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করলো। নানা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে। আমি মনে করি, করোনা আল্লাহর নিদর্শন ছাড়া আর কিছু নয়। এটি মানবজাতির জন্য এক সতর্কবার্তা।
করোনায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শীর্ষে এমন দেশ ও জাতিসমূহ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তার ধ্বংসলীলা শেষ না হয়ে নতুনভাবে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহর নাফরমানির কারণে অতীত জাতিসমূহের শাস্তির কথা আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবে আমাদেরকে স্মরণ করে দিয়েছেন। আদ, সামুদ ও ফেরাউনের জাতিও ছিল শক্তিমান কিন্তু আল্লাহর মোকাবিলায় তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারেনি।
পৃথিবীতে চলছে স্বৈরশাসন (সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন), আবার নগ্নতা, বেয়াহাপনা ও অশ্লীলতার সয়লাব। আল্লাহপাকের স্পষ্ট ঘোষণা, জনপদের মানুষ ঈমান আনলে ও তাঁকে ভয় করে চললে আসমান ও জমিনের বরকতের দুয়ারসমূহ খুলে দিবেন আর অমান্য করলে পাকড়াও করবেন (সুরা আরাফ ৯৬)। ভূমিকম্প ও করোনাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের জন্য সতর্ক বার্তাই বটে।
যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু চলে আসতে পারে এবং তখনই আমাদের সকল তৎপরতা শেষ হয়ে যাবে- আমরা কি সেটি ভেবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারি না? এজন্য সহজ বিধান- শুধু বলতে হবে পরোয়ারদেগার, তুমি আমাদের ক্ষমা করো এবং তোমার পথে চলাটা সহজ করে দাও।
আসুন, আমরা আমাদের মহান রবের ক্ষমা ও জান্নাতের পথে ফিরে আসি। আমরা ভুলে যাই সকল হিংসা-বিদ্বেষ – সেটি হোক পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মী, বস ও অধীন এবং নেতা-কর্মীর মাঝের সবধরনের ভল বুঝাবুঝি। পরিবারকে আমরা গড়ে তুলি নিরাপদ আবাস ও আমাদের প্রশান্তির স্থান হিসেবে এবং কর্মক্লান্ত হয়ে ঘরে খুঁজি স্বস্তি, আনন্দ ও তৃপ্তি।
আমরা পরস্পরকে ক্ষমা করি, ক্ষমার মধ্যে আছে প্রশান্তি, আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের ওয়াদা। সবধরনের জুলুম থেকে নিজেকে সরিয়ে আনি। আল্লাহ তাঁর নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করেছেন। বান্দার মধ্যে জুলুম তিনি সহ্য করেন না। জালেমকে শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি সবসময় মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেন না। আল্লাহর সবধরনের নাফরমানি থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি।
হে রব! মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাদের মৃত্যু দিও না। তুমি আমাদের ক্ষমা করো। আমাদের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন ও সকল মুসলমানকে ক্ষমা করো। আমাদের প্রিয় দেশটিকে সবার জন্য নিরাপদ করো। আমিন।