যাদের বাবা-মা বেঁচে আছেন, তারা বড়ো ভাগ্যবান। আর যাদের বাবা-মা মারা গেছেন তারাও বাবা-মার খেদমত করতে পারেন। যে কোনো ভালো কাজ করে আল্লাহকে বলুন, হে আল্লাহ! তুমি এর সওয়াব আমার পিতামাতার আমলনামায় দান করো। ফলে এর সওয়াব পিতা-মাতার সাথে সাথে আপনিও পাবেন।
আল্লাহপাকের শেখানো দোয়া তো রয়েছেই ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি ছগিরা’- এই দোয়া ব্যর্থ হবার নয়। কবুল হবেই- যিনি শেখাচ্ছেন তাঁরই কাছে করা দোয়া। বেশি বেশি করে দোয়া করবেন। পিতামাতার খেদমতের ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে নানাভাবে বলা হয়েছে। তাদের খেদমতে রয়েছে জান্নাত অন্যথায় ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
মানুষকে ক্ষমা করুন বিনিময়ে আপনিও আল্লাহর ক্ষমা পাবেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে তার ভাইয়ের অপরাধ ক্ষমা করবে আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন তার অপরাধ ক্ষমা করবেন। হ্যাঁ, কারো প্রতি যদি জুলুম করা হয় তাহলে তার প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার তার রয়েছে, তবে প্রতিশোধ হবে সমপরিমাণ। আর যদি ক্ষমা করা হয় ও সংশোধন করে নেয়া হয় তাহলে তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান অর্থই হলো ক্ষমা করা ও জান্নাতে স্থান দেয়া। মানুষকে ক্ষমা করা জান্নাতে যাওয়ার একটি সহজতম উপায়। প্রতিশোধ গ্রহণ নয়, ক্ষমা করুন বিনিময়ে সহজে জান্নাত পাবেন।
গিবত যে গুনাহের কাজ তা লোকজন ভুলেই গেছে। তাই একত্র হলেই একে অপরের নিন্দা করে। গিবত জেনা অপেক্ষাও জঘন্য। আমরা জেনাকে ঘৃণা করি কিন্তু গিবতকে সেভাবে মনে করি না। আল্লাহপাক গিবতকে মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। গিবত হলো মানুষের মধ্যে দোষ রয়েছে সেটি অপরের কাছে প্রকাশ করে তাকে হেয় করা, অপমান করা। অথচ রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে তার ভাইয়ের দোষ গোপন রাখবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন। দোষ গোপনকারীর জন্য কত বড়ো সুসংবাদ!
মানুষের প্রতি জুলুম করাকে আল্লাহপাক হারাম করেছেন। সুরা হুমাজায় তিনি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে। মানুষকে যারা হেয় করে, চড়-থাপ্পড় মারে, গালাগাল করে, অপমান করে এবং অসাক্ষাতে নিন্দা করে- এরা কেউ আল্লাহর বান্দা হতে পারে না। এদের পরিণতি হুতামা, আল্লাহর আগুন প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত- উৎক্ষিপ্ত। আমার জানা মতে আল্লাহপাক জালেমের প্রতি চরম ক্রোধ প্রকাশ করতে গিয়ে এই একটি জায়গায় জাহান্নামকে আল্লাহর আগুন বলেছেন। মনে রাখবেন, জালেমের জন্য জান্নাতে এক ইঞ্চি পরিমাণ জমিও বরাদ্দ নেই যদি তওবা না করে|
আমাদের দেশে হিংসার চাষ হয়। হিংসা আছে পরিবারে, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে, সমাজে, রাজনীতির অঙ্গনে, এমনকি আলেম সমাজের মাঝেও। আপনারা যদি জান্নাতের প্রত্যাশী হন তাহলে অবশ্যই হিংসামুক্ত হয়ে জীবন যাপন করতে হবে। হিংসা শুধু কবিরা গুনাহ নয়, হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংসকারী কঠিন অপরাধ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। সমাজে মারামারি, গুম-খুন ও গিবতের মূল কারণ হিংসা।
শবে কদরসহ বিশেষ বিশেষ রাতে আল্লাহপাক তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং এই সাধারণ ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে সেই হতভাগা যে শিরক করে ও হিংসা করে। হিংসুক আল্লাহর কাছে খুবই ঘৃণিত এবং সুরা ফালাকে আল্লাহ হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। যার অন্তরে হিংসা আছে সে বড়ো সংকীর্ণমনা, সে মানুষকে ক্ষমা করতে জানে না।
চলবে-