ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণিত চরিত্র ফেরাউনের দেশ মিশর। ফারাও সাম্রাজ্যের নানান সৃষ্টি, শিল্প নৈপূন্যে আর নীলনদের দেশ মিশরে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার পরই সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব ঈদে মিলাদুন্নবী।
মিষ্টি ভোজন প্রিয় মিশরীয়রা এই দিবসটিকে মোলিদ আল নাবী বা মোলিদ আল রাসুল (সাঃ) নামেই ডাকে। প্রতি বছর আরবী মাস রবিউল আওয়াল শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাজধানী কায়রো সহ সাড়া দেশের সুপার শপ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলি গলিতে হালাওয়েত আল-মোলিদ নামের মিষ্টির দোকানের পসরা সাজিয়ে বসে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও চিনির ঘন সিরার মিশ্রনে তৈরী করা হয় এই মিষ্টি। তার মধ্যে “মালবান” , ”উম্মে আলী” নামে মিষ্টি খুবই জনপ্রিয়।।
মিশরের অদ্ভুত আরেক ঐতিহ্য হল “আরুসাত আল-মোলিদ” (জন্মদিনের পুতুল), চিনি দিয়ে তৈরী এই পুতুল গুলোকে সাদা ও রঙিন কাপড় দিয়ে নববধূ পোশাকের সাজে সজ্জিত করে বিক্রি করা হয়, যা এদেশের শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
মিশরে প্রথম মিলাদুন্নবী উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় ফাতিমীয় খেলাফত (১০ থেকে -১২ শতক) যুগের সময় থেকে। জানা যায়, তৎকালিন শাসক গোষ্ঠী দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য বড় বড় ভোজনের আয়োজন করত এবং প্রচুর পরিমাণে হালাওয়েত আল-মোলিদ (মিষ্টি) বিতরণ করত।
আগেই বলছি এটি মিশরের একটি জাতীয় দিবস। সরকারী ছুটির এই দিনে এখানে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ হয়। আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মিশরীয় রাষ্ট্রপতি এবং আল আযহার এর গ্র্যান্ড ইমাম দেশের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ উপযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেন জাতীয় পদক। আল- আযহার ও ঈমাম হোসাইন (র.) মসজিদ সহ গুরুত্বপূর্ণ মসজিদের মিলাদুন্নবীর মাহফিল স্থানীয় টিভি চ্যানেল গুলোর মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ১২ রবিউল আওয়াল এর দু-তিন দিন আগে থেকেই সারা মিশর জুড়ে চলে মিষ্টি বিতরণ। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হালাওয়েত আল-মোলিদ মিষ্টি বিতরণ করা হয় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পাড়া প্রতিবেশীরাও একজন আরেকজনকে মিষ্টি উপহার দেন।
রাসূলের প্রতি ভালোবাসার সুদূরপ্রসারী সাংস্কৃতিক দাওয়াত। এর ভালো প্রভাব পরে বড় হলে অত্যন্ত গভীর ভাবে পরিলক্ষিত হয়, যেমন দুজনের মাঝে যেকোন বড় ঝগড়া-বিবাদ থেমে যায় শুধু ‘সাল্লি আলান্নাবী’ বাক্যটি বললেই।