Site icon World 24 News Network

মানব জীবনে ইসলামী নেতৃত্বের প্রভাব

ফাইল ছবি

বর্তমান সমাজে ইসলামী দলগুলোর মত খেলাফতে রাশেদার জামানায় মুসলিম জামা’আত বিভক্ত ছিলেন না। তারা ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সাল্লাম এর অনুসারীদের প্রথম জামা’আত,  তাদের সুশাসনে সুস্নিগ্ধ ছায়ায় মানবজাতি পরম সুখ-শান্তির অধিকারী হবে এবং তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্বের বদৌলতে সোজা-সরল পথে সঠিক গন্তব্যে পরিচালিত হবে,  আর এ পৃথিবী হবে ফলে-ফুলে ফসলের পূর্নতায় আনন্দময় ও সুসিক্ত ‘ জান্নাত- নমুনায়’  এক ‘শান্তি-উদ্যান’ এবং এটাই ছিল স্বাভাবিক। হয়েছিলোও তাই; কেননা তারা ছিলেন পৃথিবীর সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার উত্তম ব্যবস্থাপক এবং অতন্ত্র প্রহরী।

নিজের জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। তাদের জীবন ছিল খুবই সুখময়,  আজ আমাদের জীবনে যদি ক্ষমতা চলে আসে মনে হয়,  ক্ষমতা আর হারাবো না বা হারালেও আর ফিরে পাবোনা, সব এখনি লুটে নিতে হবে এবং চেটে পুটে খেয়ে ফেলতে হবে। আমাদের মনে হয় অনেক পাপ হয়ে গেছে এখন মুক্তি লাভের জন্য অস্থির হতে হবে। আমাদের ক্ষমতা আসলে মনে হয় এটা পরিপূর্ণ বিছানো ও সুস্বাদু খাবারের দস্তরখান,  তার উপর এখনই ঝাপিয়ে পড়তে হবে এবং ভোগের ভাগ বাড়ানোর উম্মুক্ত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হবে। এগুলো তাদের জীবনে ছিলনা,  বরং তাদের দৃষ্টিতে জীবন ছিলো আল্লাহ তায়া’লার নেয়ামত।

যা সকল পুন্য ও সকল কল্যানের উৎস। জীবন ছিলো তাদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত মানবীয় পূর্নতায় উত্তরনের সোপান,  জীবন ছিলো তাদের কাছে কর্মের এবং অর্জনের সংগ্রাম সাধনার একমাত্র সুযোগ যা দ্বিতীয় বার ফিরে আসবেনা।

বরকতময় ঐ মহান সত্তা যার হাতেই রয়েছে রাজত্ব,  আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান,  যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যুকে এবং জীবনকে,  যেন তোমাদের পরিক্ষা করেন যে,  তোমাদের মধ্যে কে অধিক উত্তম কর্মে ও আচরনে।( সুরা মুলকঃ ১-২) নিঃসন্দেহে আমি পৃথিবীর উপর যা কিছু আছে তা পৃথিবীর জন্য শোভা বানিয়েছি,  তোমাদেরকে পরিক্ষা করার জন্য তোমাদের মধ্যে কে উত্তম কর্মে ও আচরনে। তবে পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে সে গুলোকে অবশ্যই আমি বানাব( সুরা কাহফ, ৭-৮)

বিশ্ব জগতের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো এই যে,  তা ‘আল্লাহর রাজত্ব’ তাদেরকে তিনি তাতে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছেন,  প্রথমতঃ মানবসত্তাগত দিক থেকে,  কারন মানবজাতিকে তিনি পৃথিবীতে খলিফারূপে সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে- আর (স্বরন করুন ঐ সময়কে) যখন বললেন আপনার প্রতিপালক,  অবশ্যই আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করবো একজন খলিফা। তিনি ঐ মহান সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু আছে পৃথিবীতে তার সকলকেই। তারপর তিনি অভিমুখি হলেন আকাশের দিকে,  অনন্তর তাকে সপ্ত আকাশে সুবিন্যস্ত করলেন,  আর সর্ববিষয়ে তিনি সর্বজ্ঞ।(সুরা বাকারা -২৯) আমি অবশ্যই বনী আদমকে মর্যাদাবান করেছি এবং আমি বহন করেছি তাদেরকে স্থলে-জলে এবং রিযিক দান করেছি তাদেরকে উত্তম বস্ত্তসকল হতে এবং বিরাট শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি তাদেরকে আমার বহু সৃষ্টির উপর।(সুরা আল ইসরা-৭০)

দ্বিতীয়তঃ এদিক থেকে যে, তারা সেই পুন্যবান জামায়াত যারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহর আদেশের আনুগত্য হয়েছে। তাই তাদের তিনি পৃথিবীতে খেলাফত দান করেছেন এবং পৃথিবীর অধিবাসীদের শাসক নির্বাচন করেছেন। ইরশাদ করেছেন- ওয়াদা করেছেন আল্লাহ তাদের প্রতি, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে যে,  অতি অবশ্যই তিনি তাদের পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত করবেন,  যেমন স্থলাভিষিক্ত করেছেন তাদেরকে যারা তাদের পূর্বে বিগত হয়েছে এবং তাদের অনুকূলে প্রতিষ্ঠা দান করবেন তাদের দ্বীনকে, যা তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তারা ভয়তাড়িত হওয়ার পরিবর্তে তাদের স্বস্তি দান করবেন; কারন তারা আমার ইবাদত করে,  আর কোন কিছুকে আমার সাথে শরীক করেনা। আর যে কুফুরী করবে এরপর  তো তারাই হলো পাপাচারী। আর তাদেরকে তিনি পৃথিবীর যাবতীয় নেয়ামত ভোগ করার অধিকার দান করেছেন,  তবে অপচয় ও অপব্যবহারের সাথে নয়। ইরশাদ হয়েছে-  তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু রয়েছে পৃথিবীতে।( সুরা বাকারা – ২৯)

আর তিনি তিনি তাদেরকে পৃথিবীর সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর উপর কর্তৃত্ব দান করেছেন,  যাতে তারা তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং তাদের জীবন চরিত্র ও গতিবিধি এবং ঝোঁক ও প্রবনতাকে কল্যানের পথে সুনিয়ন্ত্রিত রাখে,  যেন তারা ভ্রষ্টকে পথ প্রদর্শন করে এবং বিনষ্টকে সংশোধন করে এবং যাবতীয় ফাটল মেরামত করে এবং যালিমের কাছ থেকে মাজলুমের অধিকার উদ্ধার করে; স্বস্তি ও স্থিতির ছায়া বিস্তার করে। ইরশাদ হয়েছে – তোমরা হলে সর্বোত্তম জাতি,  যাদের বের করা হয়েছে মানবজাতির জন্য, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে,  আর তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।(সুরা আলে ইমরান- ১১০) হে ঐ লোকেরা! যারা ঈমান এনেছো,  তোমরা সুবিচারে অবিচল থাকো,  আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য দানকারী হও; হোক তা তোমাদের বিপক্ষে,  বা পিতা-মাতার এবং নিকট স্বজনদের বিপক্ষে।( সুরা আননিসা)

নওমুসলিম পন্ডিত মুহাম্মদ আসাদ মুসলিম ব্যক্তিত্বের এ বৈশিষ্ট্যের একটি খুব নিখুঁত ও বাস্তবগুণ চিত্র এঁকেছেন। তিনি বলেনঃ খৃষ্টবাদের মত ইসলাম জীবন ও জগতের প্রতি কালো চশমার ভিতর দিয়ে দৃষ্টিপাত করেনা বরং একদিকে ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়,  যেন আমরা পার্থিব জীবনের মূল্যায়নে অতিকৃচ্ছ ও বৈরাগ্যের শিকার না হই,  অন্যদিকে আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার মত জীবনের ভোগবাদিতা ও স্বেচ্ছাচারে নিমজ্জিত না হই,  খৃষ্টধর্ম এর ব্যতিক্রম। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়,  তোমার প্রতিপালকের কাছে এভাবে দুয়া করো – হে আমাদের প্রতিপালক! দান করুন আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যান এবং আখেরাতে কল্যান আর রক্ষা করুন আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে।(সুরা বাকারা- ২০১)

আমাদের জীবনের সকল  চেষ্টা-সাধনার লক্ষ্য হওয়া উচিত এই যে,  ব্যক্তি পর্যায়ে ও সামাজিক স্তরে আমরা এমন অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি করবো এবং পরবর্তী পর্যায়ে তা রক্ষার চেষ্টা করবো যা ইসলামী জীবন দর্শন অনুযায়ী মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। জীবনের বিস্তৃত অংগনে মানুষ ছোট বড় যে কোন কাজ করুক ইসলাম তাকে নৈতিক দায়িত্ববোধ অর্জনের প্রতি অনুপ্রাণিত করে।

লেখক: শিক্ষার্থী,  মাহাদুল ইকতিসাদ ওয়াল ফিকহীল ইসলামী,  ঢাকা।

চরমপন্থীদের চিন্তার গোড়ায় গলদ

Exit mobile version