মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি এবং তাঁরই প্রতিনিধি। আল্লাহপাক তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার এক পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর বড়ো আদরের সৃষ্টি মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কোনো ভুলের কারণে শাস্তিস্বরূপ নয় বরং এক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই মানুষের এই পৃথিবীতে আগমন।
আল্লাহ তায়ালা আদম আ.-কে প্রথম সৃষ্টি করার পর তাঁর জুড়ি হিসেবে সৃষ্টি করেন মা হাওয়া আ.-কে এবং আমরা সবাই তাঁদেরই সন্তান। সৃষ্টি করার পর তাঁদের স্থান দেওয়া হয় জান্নাতে। ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারী এবং তাঁরা খুবই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন। আজাজিল জিন জাতির অংশ এবং কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদতের জন্য’- সুরা জারিয়াত ৫৬।
আদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহপাক ফেরেশতাদের সেজদা করার নির্দেশ প্রদান করেন। ইবলিস ব্যতীত সবাই সে করেন। ইবলিস ছিল জিন জাতির অংশ এবং আগুনের তৈরি। পক্ষান্তরে আদম আ. মাটির তৈরি এবং ফেরেশতারা নুরের তৈরি।
জান্নাতে আদম আ.-এর একটি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। জান্নাতে স্থান দিয়ে আল্লাহপাক আদম ও হাওয়াকে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ দিয়ে একটি গাছকে নির্দেশ করে বলেন, ঐ গাছটির নিকটেও যেও না এবং সেখানে গেলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শয়তান তাঁদের কল্যাণকামী সেজে উভয়কে প্ররোচিত করে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা ভুলিয়ে দেয়।
মা হাওয়ার প্ররোচনায় আদম আ. ফল ভক্ষণ করেছেন- এ কথার কোনো ভিত্তি নেই বরং কুরআনে আদম আ.-কে সম্বোধন করে কথাগুলো বলা হয়েছে। আদম আ. পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন- এমনটিও বলা যায় না, বরং ভুল উভয়ই করেছেন (আদম ও ইবলিস) কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো আদম আ. ভুল করার সাথে সাথে অনুতপ্ত হন ও ফিরে আসন (তওবা করেন)। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবপ্রকৃতি তুলে ধরা হয়েছে।
পক্ষান্তরে ইবলিস ভুলকে স্বীকার না করে গর্ব ও অহঙ্কারে মেতে উঠে এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে। এই সমাজে মানুষ ভুল করে ভুলের উপর অনঢ় হয়ে না থেকে ফিরে আসলে সে তার পিতা আদমেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, পক্ষান্তরে ভুলের স্বীকৃতি না দিয়ে নিজেকে বড়ো মনে করা শয়তানেরই অনুসরণ এবং ইবলিসের সাথে তার অনুসারীদের দ্বারা আল্লাহপাক জাহান্নাম পূর্ণ করবেন।
চলবে…