দরিদ্র কে?

যার অর্থবৃত্ত নেই, জমি-জমা নেই, দালান-বাড়ি নেই, ব্যাংক-ব্যালেন্স নেই- সেইতো দরিদ্র?!

দরিদ্র কে? এ প্রশ্নের জবাবে সবাই বলবে- যার অর্থবৃত্ত নেই, জমি-জমা নেই, দালান-বাড়ি নেই, ব্যাংক-ব্যালেন্স নেই- সেইতো দরিদ্র। হ্যাঁ, এ কথার মধ্যে মিথ্যার লেশ নেই।

তবে তা অবশ্যই সংকীর্ণ ধারণা এবং এ দুনিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে। আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ সা. তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে এমন প্রশ্ন করলে তাঁরাও আমাদের মতো করেই জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁদের ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বলেন- সত্যিকার দরিদ্র সেই যে নামাজ, রোজা, জাকাত, হজসহ নানাবিধ সওয়াবের কাজ করার সাথে সাথে মানুষের প্রতি জুলুম করে। কাউকে গালি দেয়, আঘাত করে, সম্মান হানি করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে এবং চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিসহ নানাভাবে মানুষের অধিকার হরণ করে।

মানুষ মারা যাবার পর তার ধন-সম্পদ, সোনাদানা সবই দুনিয়ায় রয়ে যাবে এবং সাথে যাবে নেক ও বদ আমল । ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহ আখিরাতে আদালত বসাবেন এবং প্রত্যেকের দেনা-পাওনা সেখানে মেটানো হবে। মজলুমের সকল পাওনা সেদিন জালেমের কাছ থেকে আদায় করে দেয়া হবে। কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ জুলুম করা হবে না।

মজলুমের পাওনা পরিশোধ করা হবে জালেমের নেক আমল দিয়ে এবং পরিশোধ করার মতো কোনো নেক আমল না থাকলে সে সময়ে মজলুমের গুনাহ জালেমকে দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সত্যিই সেদিন জালেমই হবে সবচেয়ে নিঃস্ব ও দরিদ্র।

আজ পৃথিবীতে জালেমেরই জয়জয়কার। ছলে-বলে- কৌশলে সমাজের নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে নির্মূলে মেতে উঠে এবং অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার জন্য চালায় দখলদারিত্ব। মানুষ যাতে সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করতে না পারে সে জন্য থাকে নানা কুটিল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত। এ সবই সম্ভব আল্লাহর প্রতি ভয়হীনতা ও আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি না থাকার কারণে। কতভাবেই না চালানো হচ্ছে মানুষের প্রতি জুলুম। অথচ মানুষকে একটু গালি দেয়া ও নিন্দা জানানোকেই আল্লাহ কতো খারাপভাবে উল্লেখ করেছেন।

তাঁর বাণী- ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে’। এদের জন্যই রয়েছে হুতামা (চূর্ণ-বিচূর্ণকারী স্থান) এবং তা আল্লাহর আগুন প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। আল্লাহর আগুনই জালেমদের শাস্তি এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।

যারা ঈমানদারদের কষ্ট দেয় তাদের পরিণতি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’। স্রেফ ইসলামের কারণে আজ দেশে দেশে আল্লাহর বান্দাদের ওপর চলছে সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতন। মুসলমানদের একটি বিরাট অংশ নিজেদের মুসলিম পরিচয়ে গর্ববোধ করে না বরং তারা জালেমের সহযোগী হয়ে ঈমানদারদের প্রতি অত্যাচার-নির্যাতন করে যাচ্ছে।

আল্লাহ তায়ালা জালেম ও মজলুম উভয়কেই পরীক্ষার সম্মুখিন করেছেন। ঈমানের দাবীতে কে কতখানি সত্যবাদী মজলুম সে পরীক্ষাই দিয়ে যাচ্ছে, আর জালেম কতখানি সীমালঙ্ঘন করতে পারে আল্লাহপাক জালেমের কাছ থেকে সে পরীক্ষাই গ্রহণ করছেন। দুনিয়ার জীবনটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। প্রতিনিয়তই আমরা মৃত্যুর খবর পাই। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মজলুমের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটে, আর অনন্তকালব্যাপী জালেমের দুঃখ-কষ্ট শুরু হয়। সেদিন তার মতো নিঃস্ব ও হতভাগা আর কেউ থাকবে না।

হে আল্লাহ! তুমি জালেমের জুলুম থেকে তোমার মজলুম বান্দাদের হেফাজত করো। আমিন।

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী

কলামিস্ট এবং সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button