ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীতে মথুরার কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ৷ সেই উপলক্ষ্যে গোটা দেশে আজ পালিত হচ্ছে জন্মাষ্টমী৷ করোনা আবহে উৎসবের রং কিছুটা ফিকে। তবে মথুরা, বৃন্দাবনে দিনটিকে সাড়ম্বরে পালন করা হচ্ছে। রয়েছে পুণ্যার্থীদের ভিড়। বিভিন্ন মন্দিরে চলছে আরতি। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নয়ডার ইসকন মন্দিরে কৃষ্ণনামে মেতেছেন ভক্তরা। দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই আজকের এই পুণ্যতিথিতে
অন্য শিশুদের মতোই কৃষ্ণ মাটি মুখে তুলে খাচ্ছিলেন। গোপীগন এ কথা তাঁর মা যশোদাকে জানান। যশোদা ধমক দিয়ে মুখ খুলতে বলেন। আর কৃষ্ণ মুখ খুলতেই ব্রহ্মাণ্ডের দর্শন করেন।
পঞ্জিকা অনুসারে, ভাদ্রমাসে কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। আজ ৩০ অগাস্ট এ বছরের জন্মাষ্ঠমী। দেখে নেওয়া যাক শ্রীকৃষ্ণের শৈশবের কিছু কাহিনী।
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল মথুরায় কংসের কারাগারে। সেখান থেকে সেই রাতেই গোকুলে নন্দালয়ে কৃষ্ণকে রেখে এসেছিলেন তাঁর বাবা। গোকুল ও বৃন্দাবনেই কেটেছে কৃষ্ণের শৈশব। আর শৈশবেই কংস তাঁকে মারার জন্য পাঠিয়েছিলেন পুতনা, কাগাসুর ও শ্রীধর তান্ত্রিক, উৎকচ, বকাসুর, অধাসুর ও তৃণাসুরদের। কিন্তু নিজের মায়াজালে তাদের হত্যা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। গোকুল ও বৃন্দাবনে থাকাকালেই নিজের নানান লীলার রচনা করেছিলেন বালক কৃষ্ণ। অন্য শিশুদের মতোই কৃষ্ণ মাটি মুখে তুলে খাচ্ছিলেন। গোপীগন এ কথা তাঁর মা যশোদাকে জানান। যশোদা ধমক দিয়ে মুখ খুলতে বলেন। আর কৃষ্ণ মুখ খুলতেই ব্রহ্মাণ্ডের দর্শন করেন। পুরো ঘটনায় মূর্ছিত হয়ে যাওয়ার উপক্রম ঘটে যশোদার।
শৈশবে মাখন খেতে খুব ভালোবাসতেন শ্রীকৃষ্ণ। বলা হয়ে থাকে, কয়েকজন গোয়ালিনী তাঁদের আগের জন্মে খুব বড় সিদ্ধ ও তপস্বী ছিলেন। তাঁরা ঘোর তপস্যা করে শ্রীবিষ্ণুর সঙ্গে মমতার সম্পর্কের কামনা করেছিলেন। আর এই কারণেই শ্রীকৃষ্ণ ওই সমস্ত গোয়ালিনীদের মায়ের মতো ভালোবাসতেন ও তাঁদের সামনে নৃত্য করতেন। গোপীগনের নালিশে মা যশোদা একবার কৃষ্ণকে একটি অন্ধকার ঘরে নিয়ে যান, তখন সেখান থেকে কৃষ্ণের মায়ায় এক ভয়ঙ্কর সাপ বেরিয়ে আসে। সেই সাপ দেখে যশোদা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলেন কৃষ্ণকে। তখন কৃষ্ণ বলেন, সাপের সামনে মাকে ছেড়ে কীভাবে যেতে পারি। এ কথা শুনে আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন যশোদা। এরপর কৃষ্ণের ইশারায় তাঁকে নমস্কার করে সেই সাপ চলে যায়।
একবার শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ছোটবেলায় এক ফল বিক্রেতা মহিলার কাছ থেকে সমস্ত ফল নিয়ে বদলে একমুঠো ধান দিয়েছিলেন। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে চলে যান ওই মহিলা। বাড়িতে গিয়ে ঝুলি খুলেই অবাক হয়ে যান তিনি। ঝুলিতে দেখে প্রচুর হিরে-মণি।
একবার শ্রীকৃষ্ণের লীলায় খেলার সময় যমুনায় কালিয়া দহ নামে একটি স্থানে খেলার সামগ্রী পড়ে ডুবে যায়। সেই সামগ্রী তুলে আনতে যখন জলে নামার জন্য উদ্যত হচ্ছেন, তখন একজন সতর্ক করে বলেন যে, ওখানে কালিয়া নাগ থাকে। কিন্তু সেই সতর্কবাণী উপেক্ষা করেই জলে ঝাঁপ দেন। সেখানে কালিয়া নাগকে দমন করে তাকে যমুনা থেকে চলে গিয়ে মাঝ সমুদ্রের রমণক দ্বীপে চলে যাওয়ার আদেশ দেন এবং খেলার সামগ্রী নিয়ে ফিরে আসেন শ্রীকৃষ্ণ।
বৈচিত্রের এই দেশে জন্মাষ্টমী পালনের ক্ষেত্রেও নানা নিয়মের কথা জানা যায়। জায়গা বিশেষে বদলে যায় জন্মাষ্টমী পালনের রেওয়াজ। এই বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রীতির বৈচিত্র ছড়িয়ে রয়েছে।
জন্মাষ্টমীর এই উৎসবকে নানা প্রান্তে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিনী এবং শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী নামেও উদযাপন করা হয়।
যে গানে কৃষ্ণ নেই , শুনি সে কেমন গান ?
সে যে বাঁশির সুরে মাতিয়ে রেখেছে জগৎ-শুদ্ধ-প্রাণ ।
মন ময়ূরী পেখম মেলে সে সুরের তালে নাচে
প্রকৃতি তাতে ছন্দ বেঁধে সেও আপন ধাঁচে বাঁচে ।
প্রাণের দেবতা হে প্রিয় তুমি দুয়ার রেখেছি খুলে
নিজগোয়ালের মাখন দেবো , ময়ূরপঙ্খী বাঁধবো চুলে ।।