আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জুমার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করেন। ইতোপূর্বে তিনি আয়াতুল কুরসি নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছেন। আজকে তিনি আয়াতুল কুরসির ফজিলত নিয়ে আলোচনা করেন। এর সরল অর্থ-
‘মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, তিনি অনাদি, নিদ্রা ও তন্দ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না; আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তার সবকিছুরই একচ্ছত্র মালিকানা তাঁর; কে এমন আছে যে তাঁর দরবারে বিনা অনুমতিতে সুপারিশ করবে? তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছুই তিনি জানেন, তাঁর জানা বিষয়সমূহের কোনো কিছুই (তাঁর সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্তাধীন হতে পারে না, তবে তিনি যদি ভিন্ন কিছু চান (সেটা আলাদা), তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য আসমান জমিনের সবকিছুই পরিবেষ্টন করে আছে, এ উভয়টির হেফাজত করার কাজটি কখনো তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না, তিনি পরাক্রমশালী ও অসীম মর্যাদাবান’- সুরা বাকারা ২৫৫।
খতিব মহোদয় আয়াতুল কুরসির ফজিলত প্রসঙ্গে অনেকগুলো হাদিস উদ্ধৃত করেন। এর সারমর্ম হলো, আয়াতুল কুরসি কুরআন মজিদের সর্বোত্তম আয়াত ও খুবই ফজিলতপূর্ণ। যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত্যু ছাড়া তার আর কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পাঠকারীকে জান্নাতের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে। রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠকারীকে নিরাপত্তা দানের কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআন মজিদে কিছু কিছু সুরা ও আয়াত রয়েছে যা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত) ও হাশরের শেষ তিন আয়াত। সুরা ইখলাস সম্পর্কে আমরা জানি এটি কুরআন মজিদের এক তৃতীয়াংশ। আমরা দোয়া করার ক্ষেত্রে প্রায়ই তিনবার সুরা ইখলাস পড়ে থাকি। সুরা ইখলাসে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় ও নির্ভেজাল তাওহিদের কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি এখলাসের সাথে এটি মেনে নেবে সে শিরকমুক্ত এবং যে শিরক থেকে মুক্ত সে জান্নাতি। আয়াতুল কুরসিতে চমৎকারভাবে আল্লাহ তায়ালার পরিচয় পেশ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে জানবে এবং হৃদয়ে অনুভব করবে ও মেনে চলবে সে তো জান্নাতি হবেই।
ইসলামের প্রাণসত্তা হলো তাওহিদ। আল্লাহপাক নিজেই তাঁর বান্দাদের কাছে নিজের পরিচয় পেশ করে বলেছেন, তিনি আল্লাহ সেই মহান সত্তা যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। কেন তিনি একমাত্র ইলাহ, সেই কথার প্রেক্ষিতে এক এক করে তাঁর কিছু গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। হয়তো আগামীতে আমরা সেটি জানতে পারবো।
খতিব মহোদয় সমাজের অনেক কুসংস্কার তুলে ধরেন। ট্রাকের পেছনে পুরাতন জরাজীর্ণ জুতা-স্যান্ডেল ঝুলিয়ে রাখা, খেতখামারে ছেঁড়া জামা টাঙিয়ে রাখা, রাতে থালাবাসন ধোয়া পানি না ফেলানো ইত্যাদি নানা কুসংস্কার মুসলিম সমাজে চালু আছে। আসলে এর সাথে ভালো-মন্দ বা কল্যাণ-অকল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই। কল্যাণ-অকল্যাণ সবই আসে আল্লাহর কাছ থেকে এবং চাইতে হবে তাঁরই কাছে। আয়াতুল কুরসি ও সুরা ফালাক-নাস পাঠ করে আল্লাহর সকল জীবের অনিষ্ট থেকে আমরা তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি।