আল কুরআনে ইসরা ও মিরাজ : প্রামাণ্য বর্ণনা ও শিক্ষা

মাখলুকের সীমাবদ্ধ হিসাব-নিকাশ যে পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম নয়

বিশেষ দ্রষ্টব্য
  • মূল লেখকঃ মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর।

ইসরা ও মি’রাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। মুমিনের ভক্তি ও বিশ্বাস এবং আবেগ ও অনুভূতির শেকড় গভীরভাবে মিশে আছে যার সঙ্গে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাওহীদ ও ঈমানের দাওয়াতে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছেন। কাফেরদের নির্মম অত্যাচার ও অবর্ণনীয় বাক্যবাণে তিনি বিধ্বস্ত। মুষ্টিমেয় কিছু মুসলিম জুলুমঅত্যাচারে নিষ্পিষ্ট। তবুও হৃদয়ে তারা ঈমানের আলো জ্বেলে রেখেছেন।

এভাবেই এগিয়ে চলছে ইসলামের প্রচারপ্রসার। আশ্রয় ও সান্তনার বিরাট দুটি বৃক্ষ একে একে চলে গেছেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে। খাজা আবু তালিব ও উম্মুল মুমিনীন খাদীজাতুল কুবরা রা.।

আশা ছিলতায়েফবাসী যদি কথাগুলো একটু মেনে নেয়! তাওহীদের দাওয়াত কবুল করে! নাতারাও সাড়া দিল না। শুধু কি তাইনির্দয়ভাবে ক্ষতবিক্ষত করল প্রাণপ্রিয় নবীজীকে।

এমন মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ডেকে নিলেন প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঊর্ধ্বজগতে। রাতের এক খণ্ডেজিবরাঈলকে পাঠিয়েবুরাকে চড়িয়ে। কুরআনের ভাষায়

سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ اَسْرٰی بِعَبْدِهٖ لَیْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ اِلَی الْمَسْجِدِ الْاَقْصَا الَّذِیْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنْ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیْعُ الْبَصِیْرُ.

পবিত্র সেই সত্তাযিনি নিজ বান্দাকে রাতের একটি অংশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যানযার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছিতাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন। সূরা ইসরা (১৭) : ১

বস্তুত ইসরা হচ্ছেমক্কা মুকাররমা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণের সেই পর্বটুকুযা রাতের একটি অংশে সংঘটিত হয়েছিল। আর মি’রাজ হচ্ছে সেখান থেকে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের সেই বিস্তৃত অধ্যায়।

আল্লাহ তাআলা সূরা নাজমে আরো বলেন

وَ لَقَدْ رَاٰهُ نَزْلَةً اُخْرٰی، عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهٰی، عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَاْوٰی، اِذْ یَغْشَی السِّدْرَةَ مَا یَغْشٰی،مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَ مَا طَغٰی، لَقَدْ رَاٰی مِنْ اٰیٰتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰی.

বস্তুত সে তাকে (হযরত জিবরাঈল আ.কে) আরও একবার দেখেছে। সিদরাতুল মুনতাহা (সীমান্তবর্তি কুলগাছ)এর কাছে। তারই কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া। তখন সেই কুল গাছটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল সেই জিনিসযা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।

(রাসূলের) চোখ বিভ্রান্ত হয়নি এবং সীমালংঘনও করেনি। (অর্থাৎ দেখার ব্যাপারে চোখ ধোকায় পড়েনি এবং আল্লাহ তাআলা তার জন্য যে সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেনতিনি তা লংঘনও করেননি যেতার সামনে কী আছে তা দেখতে যাবে।) বাস্তবিকপক্ষেসে তার প্রতিপালকের বড়বড় নিদর্শনের মধ্য হতে বহু কিছু দেখেছে। সূরা নাজম (৫৩) : ১৩১৮

ইসরা ও মিরাজের ব্যাপারে কুরআনের বর্ণনায় সংক্ষেপে এতটুকুই বলা হয়েছে। আর বিস্তারিত এসেছে হাদীসের পাঠগুলোতে। সীরাতসুন্নাহ এবং তারীখের নির্ভরযোগ্য সূত্রে রয়েছে এর বিশদ বিবরণ। পবিত্র কালামুল্লাহর এই আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো সামনে আসে তা হচ্ছে

ক. আল্লাহ তাআলা পবিত্র সত্তা। মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেকের সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে তাঁর শক্তি ও সক্ষমতা। তিনি তার বান্দাকে রাতে পরিভ্রমণ করিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সর্ব প্রকার সংশয় ও দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

খ. ইসরা ও মিরাজ রাতে সংঘটিত হয়েছিল।

গ. মক্কা মুকাররমা থেকে নবীজীকে প্রথমে বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নবীজী ঊর্ধ্বজগতে আরোহিত হন।

ঘ. বাইতুল মুকাদ্দাস ও তার চারপাশের এলাকা বরকতময়।

ঙ. আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিরাজের নিআমত দান করেছেন তিনি তার বড় বড় কুদরত ও নিশানা দেখাবেন বলে।

চ. মিরাজের বিষয়টি এমনযা সাধারণ বোধগম্য বিষয় নয়। এটা কেবলই মহান রবের কুদরতের কারিশমা। মাখলুকের সীমাবদ্ধ হিসাবনিকাশ সে পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম নয়… ইত্যাদি।

সূত্র
মাসিক আলকাউসার

ঈসা আহমাদ ইসহাক

সহযোগী সম্পাদক : নিউজ বিভাগ এবং প্রধান অনুবাদক: আরবী বিভাগ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button