বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন)। মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ। আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। তারপর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আত্মহত্যা প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতিসহ আত্মহত্যার কারণ ও পরিণতি এবং রোধ করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
খতিব মহোদয় বলেন, আত্মহত্যার মূল কারণ ক্রোধ সংবরণ করতে না পারা। দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ, রোগ-ব্যাধি, আর্থিক সংকট, সামাজিক স্বীকৃতি না পাওয়া, নানাবিধ জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষ নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে পারে না। নিজের প্রতি তার ক্রোধ সৃষ্টি হয়। মানুষ বাঁচতে চায় এবং সে নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তারপরও নানাবিধ কারণে মানুষ বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং আত্মহননের মতো চরম ধ্বংসাত্মক পন্থা অবলম্বন করে নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়।
খতিব মহোদয় বলেন, ইসলামবিমুখ মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা অনেক বেশি। একটি পর্যায়ে তারা ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতিতেও মানুষ ধৈর্য অবলম্বন করতে পারে। ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’- মুমিনের জন্য বড় সান্ত্বনা। বিপদাপদ, দুঃখ-কষ্ট কোনকিছুই ঈমানদারদের বিচলিত করতে পারে না।
খতিব আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ নবি-রসুলদের উদাহরণ পেশ করে বলেন, সবচেয়ে কঠিন দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতের সম্মুখীন হয়েছেন তাঁরা। নিজের পরিবার, শাসকবর্গ, স্বজাতি সর্বমহল থেকে তাঁরা পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। রোগ-ব্যাধিতে অনেকেই ভুগেছেন। হজরত আইয়ুব আ. তার এক উদাহরণ। কোনো দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতে তাঁরা হতাশ হননি, পরম ধৈর্য অবলম্বন করেছেন।
সমাজ থেকে আত্মহত্যা প্রবণতা দূর করতে হলে মানুষের মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ঘটানোর কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় একজন মুমিন হাজারো দুঃখ-কষ্ট সহজেই সহ্য করতে পারে। সে এটাও জানে, আত্মহত্যার পরিণতি জাহান্নাম। তার নামাজ-রোজা, দান-খয়রাতসহ সকল ইবাদত অনুষ্ঠান কোনো কাজেই লাগবে না। যুদ্ধের ময়দানে একজন সাহাবি বীরবিক্রমে যুদ্ধ করছিলেন; এমনটি দেখে সাহাবায়ে কেরাম সেই সাহাবির খুব প্রশংসা করছিলেন।
তাদের প্রশংসা শুনে রসুলুল্লাহ সা. বললেন, সে জাহান্নামী। সবাই তাজ্জব হয়ে গেলেন। এক পর্যায়ে দেখা গেল সেই সাহাবি যুদ্ধের ময়দানে আহত হওয়ার পর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার পরিণতি সম্পর্কে খতিব মহোদয় অনেকগুলো হাদিস উল্লেখ করেন। আত্মহত্যাকারী যেভাবে আত্মহত্যা করেছে জাহান্নামে বারবার সে নিজেকে সেভাবে হত্যা করতে থাকবে। আত্মহত্যা জঘন্যতম অপরাধ। আখিরাতে আত্মহত্যাকারীর জন্য তো জাহান্নাম রয়েছেই দুনিয়ার বুকেও সে ঘৃণা কুড়ায়। তার পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন তাকে স্মরণ করতে চায় না বরং তার কথা উচ্চারিত হলে লজ্জা অনুভব করে।
মানুষ স্বতস্ফুর্ত হয়ে তার জানাযায় শরীক হতে চায় না। আত্মহত্যাকারীর জানাজা প্রসঙ্গে খতিব মহোদয় বলেন, জানাজা দেয়া যাবে কারণ রসুলুল্লাহ সা. নিজে জানাজায় শরীক না হলেও নিষেধ করেননি। তাই আলেমদের অভিমত, প্রসিদ্ধ আলেমরা জানাজায় শরীক না হয়ে মৃতের আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে জানাজা পড়া যেতে পারে। তাতেও আত্মহত্যার প্রতি এক বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হবে।
আমাদের সমাজে আত্মহত্যার কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো যুবক-যুবতিদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়া, পরকীয়া ও দাম্পত্য কলহ, একাকীত্ব, ব্যবসা বা চাকরিতে ব্যর্থতা, কর্মস্থলে বঞ্চণার শিকার, কর্মহীনতা ও হতাশা, জটিল রোগ-ব্যাধি, পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসবই দূর হতে পারে আমরা যদি ইসলামের দিকে ফিরে আসি।
আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস সকল প্রতিকূলতার মোকাবেলায় মানুষকে অবিচল রাখে ও পরম ধৈর্য অবলম্বনে শক্তি যোগায়। পরিবারের সদস্যদের পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব পালন ও সহমর্মী হওয়া সুখি জীবন যাপনের জন্য আবশ্যক। আসলে সুখি পরিবারই পারে মানুষের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস করতে।
ইসলাম পরিবারের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজে বাঁচার সাথে সাথে পরিবারকেও বাঁচানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণভাবে অনুসরণের জন্য খতিব মহোদয় তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান।