স্বাধীনতার মর্ম ইসলামী দৃষ্টিকোণ (২)

ইসলাম মানুষের অবাধ চলাচল এবং তার রুটি-রুজি তালাশের স্বাধীনতা দান করেছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য
  • সামাজিক কোনো সমস্যা রাতারাতি পরিবর্তন না করে ক্রমান্বয়ে তা দূর করে তিনি সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেছেন। আল্লাহর রসুল সা.-এর ঘরেও দাস ছিল এবং তিনি সেই দাসের সাথে এমন আচরণ করে দেখিয়েছেন, দাস তার নিজ পিতা-মাতাকে পেয়েও নবি সা.-কে ত্যাগ করতে রাজী হননি। সেই দাস আর কেউ নন, তিনি ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবি জায়িদ ইবনে হারিস রা.। ৫৪ ধারায় কাউকে ধরে এনে আদালতে রিমান্ড চাওয়া এবং দোষ স্বীকারে বাধ্য করা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বড়ো ধরনের জুলুম। ইসলামে বিচারের ক্ষেত্রে দু’টি প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। প্রথমত. স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার অর্থাৎ অপরাধী অনুতপ্ত হয়ে আখিরাতের শাস্তির পরিবর্তে দুনিয়ায় শাস্তি গ্রহণে প্রস্তুত হওয়া এবং এমতাবস্থায় আখিরাতের শাস্তি থেকে সে রেহাই পাবে। দ্বিতীয়ত. দু’জন সাক্ষীর প্রদত্ত সাক্ষ্যদানের ভিত্তিতে (ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে চারজন)। কোনো অপরাধীকে তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানে বাধ্য করার কোনো সুযোগ নেই।

স্বাধীনতার দাবি হলো প্রত্যেক মানুষ তার মান-ইজ্জত -সম্মান এবং জীবন ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে জীবন যাপন করবে। রাষ্ট্র ও সমাজ তার পূর্ণ গ্যারান্টি দিবে। মানুষকে গালি দেয়া, তাকে হেয় ও অপদস্থ করা, মারপিট করা, গুম-খুন করা সবই কবিরা গুনাহ। আল্লাহর বাণী, ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্যে যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে।’ একটু গালমন্দ করা, আড়ালে একটু দোষ প্রচারের ফল যদি হয় নিশ্চিত ধ্বংস (হুতামায় নিক্ষেপ); তাহলে গুম-খুনের পরিণতি কী হতে পারে?

ইসলাম মানুষের অবাধ চলাচল এবং তার রুটি-রুজি তালাশের স্বাধীনতা দান করেছে। এ ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরী করা, দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো ইসলাম পছন্দ করে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী স্মরণ করতে হয়- ‘হে ইমানদারগণ! বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো, কারণ কোনো কোনো ধারণা ও অনুমান গুনাহ। দোষ অন্বেষণ করো না। তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? দেখো, তা খেতে তোমাদের ঘৃণা হয়। আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ অধিক পরিমাণে তওবা কবুলকারী এবং দয়ালু’- সুরা হুজুরাত ১২।

গোপন বিষয় খোঁজাখুঁজি করতে রসুল সা. নিষেধ করেছেন। কেউ যদি আড়াল থেকে কারো ঘরে উঁকি মারে তবে তার চোখ ফুটো করে দেওয়ার জন্য তিনি বলেছেন। দু’জন লোকের আলাপরত অবস্থায় তৃতীয় জন তা শোনার চেষ্টা করাকে গুনাহ বলেছেন। বর্তমান যুগে অপরের চিঠি পড়া বা মোবাইলে আড়িপাতা একই অপরাধ। এ সবই মানুষের স্বাধীনতা বা অধিকার হরণের উদাহরণ। অবশ্য অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে সবই বৈধ।

অধিকার হরণ প্রসঙ্গে ওমর রা.-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। তিনি নাগরিকদের অবস্থা জানার জন্য ছদ্মবেশে বের হতেন। একদিন চলার পথে এক বাড়ি থেকে গানের আওয়াজ শুনতে পান। তিনি দেয়াল টপকিয়ে দেখেন যে সেখানে নারী ও মদ। তিনি লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন- তুই কি মনে করেছিস, অপরাধ করবি আর কেউ তা টের পাবে না?’

(চলবে)

স্বাধীনতার মর্ম ইসলামী দৃষ্টিকোণ (১)

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী

কলামিস্ট এবং সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button