স্বাধীনতার মর্ম ইসলামী দৃষ্টিকোণ (৩)
সকলের সাথে সদাচরণ ইসলামের দাবি।
- লোকটি জবাবে বলেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, তাড়াহুড়া করবেন না, আমি অপরাধ একটি করলে আপনি করেছেন তিনটি- (১) আল্লাহ তায়ালা অন্যের দোষ খুঁজতে নিষেধ করেছেন অথচ আপনি তাই করলেন, (২) আপনি সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে দেয়াল টপকালেন, (৩) আপনি অনুমতি ছাড়াই গৃহে প্রবেশ করলেন।’ ওমর রা. লজ্জিত হয়ে ফেরৎ আসলেন। ইসলামে এরই নাম স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চৌদ্দ শ’ বছর পূর্বে। ইসলাম দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মর্যাদার উচ্চাসনে আসীন করেছে। রসুল সা.-এর ঘোষণা- ‘দু’টি চোখকে জাহান্নামের আগুন দগ্ধ করবে না- এক. আল্লাহর ভয়ে যে চোখ থেকে অশ্রু ঝরে এবং দুই. যে চোখ জনগণের নিরাপত্তা বিধানে বিনিদ্র রজনী যাপন করে’। ইসলাম দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন- শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে জান্নাতে যাওয়ার পথটাকে সহজ করে দিয়েছে। যদি বিপরীত হয় তাহলে জাহান্নামই হবে তাদের ঠিকানা।
নিজে স্বাধীনতা ভোগের সাথে সাথে অপরের স্বাধীনতা বা অধিকারের স্বীকৃতি দান ইসলামেরই দাবি। জাতি- ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জীবন-সম্পদ ও সম্মান সমান গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর নবি সা. বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধরত একজন মুজাহিদকে হত্যা করা ও একজন অমুসলিমকে হত্যা করা সম অপরাধ। মান-ইজ্জত-সম্মানের উপর সামান্য আঘাতও কবিরা গুনাহ।
সকলের সাথে সদাচরণ ইসলামের দাবি। নবি মুহাম্মদ সা. বলেছেন, ‘যারা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়’। মানুষের প্রতি সামান্য সম্মানবোধের অভাব যদি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া হয় তাহলে যারা মানুষের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করে তাদের পরিণতি কী হবে?
মানুষের মৌলিক প্রয়োজন (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) পূরণের দাবি মেটানো রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশ তার নাগরিকদের এসব মৌলিক প্রয়োজন পূরণের গ্যারান্টি প্রদান করে। তাইতো খলিফা ওমর রা.-কে বলতে হয়েছিল- ‘মানুষ কেন ফোরাত কূলে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় তাহলে ওমরকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে’।
যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান (সরকারি চাকরি) এবং স্বাধীন ব্যবসা- বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ দাবি করাও নাগরিকের অধিকার। সেখানে রাষ্ট্র বা সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব বা দুর্নীতি কাম্য নয়।
রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষ যাতে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য রাষ্ট্র বা সরকার নানাবিধ ব্যবস্থা অবলম্বন করে। মানুষের স্বাধীন চলাফেরা ও কর্মকাণ্ডে যাতে কেউ ব্যঘাত না ঘটাতে পারে সেজন্য রয়েছে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
রাষ্ট্রের এই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতীক। অপরাধী ভয় করলেও শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদেরকে স্বস্তির কারণ হিসেবে জানবে এবং তারা জনগণের ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হবে সিক্ত। তারা সমাজ থেকে অপরাধ নির্মুল করবে, মিথ্যা দূর করবে এবং মানুষ সর্বদাই তাদের থেকে ভালোটাই আশা করবে। ইউরোপ-আমেরিকার গণতান্ত্রিক দেশসমূহ তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বন্ধু এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।