৪ঠা জানুয়ারি ২০১৬ ভোর ৫-০৭। আমি তখন বাথরুমে এবং আমার স্ত্রী নামাজে; এমন সময় বিল্ডিং কেঁপে উঠলো।
আমার স্ত্রী নামাজ ছেড়ে দিয়ে ভূমিকম্প বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি আমার প্রাকৃতিক প্রয়োজন অসমাপ্ত রেখে বেরিয়ে পড়লাম। স্ত্রী চাবি নিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। আমিও তার পেছন ধরলাম।
এতো কিয়ামতেরই আলামত। সেদিন কারো পক্ষে তার নিকটজনের খোঁজ নেয়ার সুযোগ থাকবে না। বিল্ডিং-এর সবাই রাস্তায় বেরিয়ে আসলো। আমরা আমাদের বেয়াই-এর বাসার দিকে এগিয়ে গেলাম এবং সেখানে তাঁর খোঁজ নিলাম ও টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজে দেখলাম যে ‘সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত’।
ভারতের মণিপুরে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আমাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। আর কিয়ামতের দিন কম্পনের পর কম্পন গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়া হবে। কুরআন মজিদে নানাভাবে এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নাস্তিক ও প্রকৃতিবাদীরা এর নানা ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমি বিশ্বাস করি যে এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তায়ালা।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে নানাভাবে সতর্ক করেন এবং তাঁর বান্দাদের অসহায়ত্বের কথা স্মরণ করে দেন। মৃত্যুর জন্য আমাদের সবারই প্রস্তুত থাকা দরকার। রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার পর আমার জামাই এবং পরবর্তিতে ছেলে, বেয়াই, শ্বশুর, বোন ও শালিসহ আত্মীয়- স্বজনের সাথে মোবাইলে সংবাদ আদান-প্রদান হয়। কিন্তু ভূমিকম্পের সময় আমার কেবল নিজেরই কথা অনুভূত হয়েছে। আমার স্ত্রীতো আমাকে রেখেই বেরিয়ে গেছেন।
হ্যাঁ, এটাই আল্লাহর নিয়ম। সেদিন যে মা তার সন্তানকে বড় যত্ন করে গর্ভে ধারণ করছে সে তা ভুলে যাবে। আমরা অনেক সময় স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মায়ায় বড় কাতর হয়ে পড়ি এবং হালাল-হারামের বাছ-বিছার না করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার চেষ্টা করি। সবই মিথ্যা। সেদিন মানুষ নিজেকে নিয়েই পেরেশান থাকবে।
এমনকি স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী তার স্ত্রীকে, মাতা-পিতা তার সন্তানকে এবং সন্তান তার মাতা-পিতাকে ভুলে যাবে বা দূরে থাকার চেষ্টা করবে। আমরা স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের হক আদায় করবো নিজেদের স্বার্থেই। কিন্তু তাদের কারণে আমরা সর্ষেকণাও অন্যায় করবো না। সাথে সাথে চেষ্টা করবো ঋণমুক্ত থাকার এবং কথা, আচরণ, লেনদেন বা কোনো অবস্থাতেই কারো প্রতি সামান্যতম জুলুম করবো না; কারণ জালেম কখনো জান্নাতে যাবে না যতক্ষণ না মজলুম তাকে ক্ষমা না করে।
আজকের ভূমিকম্পের নগদ লাভ চোখে পড়লো। ফজরের নামাজে গিয়ে দেখলাম মুসল্লি দ্বিগুণ। আল্লাহ তাঁর দুর্বল বান্দাদের মধ্যে অনেকের ঈমানকে সতেজ করে দিয়েছেন। এই সতেজ ভাব অব্যাহত থাক এবং অন্যায়-অপকর্মের কারণে আমাদেরকে সমূলে ধ্বংস না করে দিক- আল্লাহ তায়ালার কাছে সেটাই আমাদের বিনীত প্রার্থনা।