Site icon World 24 News Network

ইসলামে জননিরাপত্তা (পর্ব-১)

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের বাড়ি অত্যন্ত নিরাপদ

একটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো তার দেশের জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান ও দেশকে বহি:শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এর থেকে আলাদা নয়।

জাতির দেয়া আল-আমিন ও আস-সাদিক খেতাবপ্রাপ্ত মুহাম্মদ সা. মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দানের সাথে সাথে জাতির প্রিয় এই মানুষটি দ্রুতই তাদের দুশমনে পরিণত হন। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনে অতিষ্ঠ তাঁর সাথিরা খানায়ে কাবায় বিশ্রামরত নবি মুহাম্মদ সা.-এর নিকটে এসে জানালেন- ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ সা.! আমরা আর সহ্য করতে পারছি না; আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন’।

জবাবে রসুল সা. বলেন- ‘তোমরা আর বিপদ-মুসিবত কতটুকু দেখলে, ইতোপূর্বে যারাই ইমান এনেছে তাদের সকলকেই নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। কাউকে শূলেবিদ্ধ করে বা কাউকে করাতে দ্বিখণ্ডিত করে হত্যা করা হয়েছে, আবার লোহার চিরুণী দিয়ে কারো শরীর থেকে গোশত পৃথক করা হয়েছে; তারপরও তারা ইমান ত্যাগ করেনি। তোমরা ধৈর্যধারণ করো; সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন একজন ষোড়শী স্বর্ণালঙ্কারসহ সানা থেকে হাজরা মাউত একাকী হেঁটে যাবে, তাকে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতে হবে না’।

আল্লাহর রসুল সা. তাঁর সাথিদের একটি নিরাপদ সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যেখানে থাকবে শুধুই শান্তি; কোনো গুম-খুন, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই- রাহাজানি কোনো কিছুরই ভয় থাকবে না। সে সমাজে মানুষ কেবল আল্লাহকেই ভয় করবে এবং আল্লাহর ভয় মানুষকে সকল প্রকার ভয় থেকে মুক্ত করে দিবে। হ্যাঁ, নবি মুহাম্মদ সা. তাঁর জীবদ্দশায় এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন- যেখানে মানুষ ঘরে-বাইরে, রাস্তা- ঘাটে, অফিস-আদালতে, বাজারে সর্বত্রই পূর্ণ নিরাপত্তা ভোগ করেছে।

রসুল সা. ও তাঁর সাথিরা মক্কার কাফির-মুশরিকদের অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতনে টিকতে না পেরে বাধ্য হয়েছিলেন মদিনায় হিজরত করতে। সেখানে একটি অনুকূল পরিবেশ পেয়ে রসুল সা. গড়ে তোলেন ছোট্ট একটি ইসলামী রাষ্ট্র এবং তখন থেকেই ইসলামের সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হতে থাকে।

ইসলাম মূলত একটি রাষ্ট্রীয় দ্বীন, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছাড়া এর কল্যাণকারিতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয় এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব লাভের পরই ইসলাম দ্রুত সম্প্রসারিত হয়। মাত্র আট বছরের ব্যবধানে রসুল সা. ও তাঁর সাথিরা বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন। মক্কাবাসীরাও উপলব্ধি করে যে মুহাম্মদ সা.-এর সাথে যুদ্ধ করা হবে অনর্থক। তাই তারা ইসলামের ছায়াতলে আসার পথ খুঁজতেছিল।

এ সময়ে মুহাম্মদ সা. ঘোষণা দিলেন-যারা খানায়ে কাবায় অবস্থান করবে তারা নিরাপদ, কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের বাড়িতে যারা অবস্থান করবে তারা নিরাপদ এবং যারা নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করবে তারাও নিরাপদ। অতীতের শত অত্যাচার-নির্যাতন মুহূর্তেই ভুলে গেলেন মুহাম্মদ সা.-এর সঙ্গী-সাথিরা। বদলা গ্রহণের লক্ষ্যে কাউকে তালাশ করতে কোনো বাড়িতে কেউ গেলেন না। কারণ ও বাড়িতো কাবার মতই নিরাপদ।

চলবে…

Exit mobile version