নকল হইতে সাবধান! (পর্ব-৩)
'নকল’ একটি আরবি শব্দ যেন সে বাংলারই জাতভাই।
যতই বলি, নকল হইতে সাবধান! নকল কি নূতন অস্বাভাবিক দুর্লভ জিনিস? মোট্টেই না। নকল অতি পুরাতন মাদক, নকল করা স্বাভাবিক। বুদ্ধিমান বলেই মানুষ নকল করে–পছন্দনীয় কর্ম ও কীর্তির। শুদ্ধাশুদ্ধির উদাহরণ দেখে পূর্বপুরুষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে। অতীতের বিদ্যা বুদ্ধি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নূতন কিছু আবিষ্কার অভিযোজন পরিশুদ্ধকরণও একধরনের নকল। জীবনধারণে, সামাজিকতায়, ধর্মাচরণে, রীতিনীতিতে সর্বত্রই নকলের সদম্ভ পদচারণা।
মানুষ কি তবে নকল জীবনযাপনই করে? অবশ্যই। অন্তরে এবং বাহিরে দুভাবেই মানুষ নকল জীবনে অভ্যস্ত বা বাধ্য হয়। নানা কারণে মানুষ ভেতরের আসল রূপে ধরা দেয় না, মনের ঠিক কথাটা প্রকাশ করে না। বাহ্যিকভাবেও, সাজগোছে ফিটফাট না হয়ে অন্যের সামনে বেরই হয় না। সুতরাং আপনি যে মানুষটাকে সাক্ষাতে দেখেন, সে ভেতরে-বাইরে অনেকাংশে নকল। শিক্ষিত মানুষ পরিশীলিত পরিশুদ্ধ পরিপূর্ণ হয়, আবার নকল মেকি ভেকও হয়।
আরেকটি কথা আছে আমার। নকল মানুষ নকল জীবনে সত্য জীবনের আসল মানুষটাকে খুঁজে পায় না। নকল করলেও মানুষ জানে নকল হলো স্বাভাবিকতার বিপরীত। অগ্রহণীয়কে গ্রহণ করলেও মনে করে নকল মানে অসত্য অন্যায়, নোংড়া নিকৃষ্ট, তিক্ত পরিত্যক্ত, সহজ সস্তা। নকল তাই অপরিহার্য হলেও তা পরিত্যাজ্য।
সুতরাং যেমনই হোক আমার নবসৃষ্টি, নকলে ব্যাকুল না হয়ে নিজেকে প্রকাশ করি নিজের মতো করে। ঘষায় ঘষায় হয়তো আমারটাও ধারালো হয়ে উঠবে বেশ, কালোতেও সাদার ঔজ্জ্বল্য চোখে পড়বে কারো। অবসরে ভাবি, চিন্তায় প্রকাশে কর্মে যদি আদি খাঁটি নির্মল মৌলিক হতে পারতাম, কেমন হতো এই জীবনটা? হোক জীবনটা নকলের–দেখি না হয়ে আরেকটু সত্য শুদ্ধ প্রকৃত।
দুঃখিত, আমার এই লেখাটি কিন্তু ‘নকল’ নয়!
((সমাপ্ত))