সমাজে বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যাদের অর্থবিত্তের পরিমাণ আমাদের ধারণারও বাইরে। কিন্তু তাই বলে কি তারা নিজেদেরকে ধনী মনে করে? কক্ষণই নয়। তারা নিজেদেরকে তুলনা করে টাটা, বিড়লা ও বিল গেটসের সাথে। মেধা-যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে তারা নিজেদেরকে আজ এ পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
কিন্তু আমাদের দেশের ধনীরা জনগণ ও রাষ্ট্রের অর্থ লুটেপুটে বড়ো হতে চায়। সমাজের অধিকাংশ সম্পদশালী মানুষের অবস্থা এমনই। আল্লাহর ভয় ও আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি না থাকায় তাদের এ অবস্থা। তারা তাদের অবস্থানে সন্তুষ্ট নয়। তারা বেশি পেতে চায়। আল্লাহ সুরা তাকাসুরে তাদের অবস্থা যথার্থই বর্ণনা করেছেন। রসুল সা. বলেছেন- ‘মানবশিশুর অবস্থা বড়ো আশ্চর্য, এক উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ দেয়া হলে সে আর একটি চায়; মাটি ছাড়া অন্য কিছু তাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না’।
সম্পদশালী মানুষের একটি বড়ো অংশ ঋণখেলাপী এবং এদের মধ্যে অনেকে ঋণ মওকুপের জন্য ভিক্ষুকের মতো উপস্থিত হয় বা শক্তির দাপট দেখায়। অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনকারী সবাই জালেম এবং আখেরাতে প্রতিটি অর্থের হিসাব দিতে গিয়ে তারা নিঃস্ব ও দরিদ্র হয়ে যাবে। আমরা যাদেরকে ধনী ভাবছি রসুল সা.-এর ঘোষণা মোতাবেক এরা কেউ ধনী নয়, বরং ওরা আমলের দিক দিয়ে একেবারে দরিদ্র এবং জাহান্নামই তাদের ঠিকানা।
এই শ্রেণির মানুষের নামের পূর্বে আলহাজ লেখা এবং বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজে পৃষ্ঠপোষক/সভাপতি হওয়ার খুব সখ। ওরা মানুষকে প্রতারিত করতে পারলেও আল্লাহকে প্রতারিত করা কখনই সম্ভব নয়। কারণ হারাম উপার্জনে গঠিত শরীর জাহান্নামের জ্বালানি বৈ আর কিছুই নয়। এরা শ্রমশোষণকারী। মানুষের প্রতি জুলুম করে কেউ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুললে সে মোটেই ধনী নয়; বরং এই সম্পদ তার জন্য বিপদের কারণ হবে এবং আখিরাতে মজলুমের পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে সে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়বে।
ধনী হওয়াটা একেবারে আপেক্ষিক ব্যাপার। রসুল সা. বলেছেন- ‘মনের ঐশ্চর্য প্রকৃত ঐশ্চর্য’। অর্থাৎ ধন থাকলেই ধনী হয় না, যার মন বড়ো সেই প্রকৃত ধনী। ভ্যানচালক, কুলি-মুটে-মজুর যাদেরকে আমরা দরিদ্র ভাবি তাদের সুস্থতা ও হাসিখুশি জীবন, অসুস্থ ও পারিবারিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত মানুষ অপেক্ষা অনেক সুখি এবং বলা যায় ওরাই সত্যিকার ধনী ও সম্পদশালী। খুশি ও আনন্দময় এবং ঝামেলামুক্ত জীবনের স্বাদই আলাদা। তাদের সাথে তথাকথিত ধনীরা কোনভাবেই তুলনীয় নয়।
এই সমাজে যে অল্পে তুষ্ট এবং ঋণমুক্ত সেইতো ধনী। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী বান্দা হয় অতীব ধৈর্যশীল ও তার রবের ওপর নির্ভরশীল এবং সংকীর্ণতা তাকে কখনই স্পর্শ করতে পারে না। সে হয় উদার ও প্রশস্ততার অধিকারী এবং সহজেই মানুষের ত্রুটি- বিচ্যুতি মাফ করে দিতে পারে; প্রতিশোধস্পৃহা তার মধ্যে কাজ করে না। হাদিসের ভাষায় এমন উদার ও প্রশস্ততার অধিকারীকেই ধনী বলা যা। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে তারা প্রশংসনীয় এবং তারাই হলো ভাগ্যবান।