সাধারণভাবে সকল মানুষ সম্পর্কে ইসলাম সুধারণা পোষণ করে যতক্ষণ কারো অপরাধ প্রকাশিত না হয়। ধারণা-অনুমানের ভিত্তিতে কাজ করা বা কাউকে সন্দেহ করে ধরে এনে স্বীকারুক্তি আদায় ইসলাম অনুমোদন করে না। ৫৪ ধারায় ধরে এনে রিমান্ডে অত্যাচার চালানো বড় ধরনের জুলুম। একজন ব্যক্তিকে তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বাধ্য করা কখনই মেনে নেয়া যায় না।
ইসলামে বিচারব্যবস্থায় দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিবেচনা করা হয়। এক. কেউ যদি আদালতে স্বেচ্ছায় এসে অপরাধ স্বীকার করে; দুই. দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি কারো বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করে। রসুল সা.-এর কাছে এসে এক লোক স্বীকার করে যে, সে জেনা করেছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, সে কার সঙ্গে জেনা করেছে। সে এক মহিলার নাম বললে তাকে রসুল সা.-এর কাছে হাজির করানো হয়। মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হলে তা সে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় রসুল সা. মহিলাকে ছেড়ে দেন এবং লোকটির উপর দণ্ড কার্যকর করেন। মহিলার কাছ থেকে স্বীকারুক্তি আদায়ের জন্য তিনি জোর-জবরদস্তি করেননি।
উল্লেখ্য যে, অপরাধী অনুতপ্ত হয়ে দোষ স্বীকার করলে বা দুনিয়ার আদালতে কাউকে একবার শাস্তি প্রদান করা হলে সে আর আখিরাতে উক্ত অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য হবে না।
ইসলাম পূর্বযুগে একজনের অপরাধে আর একজনকে শাস্তিদান ছিল খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বংশ পরম্পরায় আরবে মারা-মারি, কাটা-কাটি চলতো। কোনো বংশের একজন নিহত হলে যে বংশের লোকদের হাতে নিহত হতো তাদের উপর প্রতিশোধ না নিয়ে তারা স্বস্তি পেত না। রসুল সা. ঘোষণা করেন- ‘পিতার অপরাধে পুত্রকে বা পুত্রের অপরাধে পিতাকে শাস্তি দেয়া যাবে না। এ সবই মুর্খতা যুগের রীতি’।
বর্তমান বিশ্বে সেই বর্বরতাই চলছে। আমরাও সেই বর্বরতা থেকে মুক্ত নই। দেশের কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে দেখা যায় সারা দেশে তাদের প্রতিপক্ষের উপর শুরু হয় তাণ্ডব। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুরু করে দেয় চিরুণী অভিযান। ১৪০০ বছর আগে ইসলাম এ বর্বরতার অবসান ঘটিয়ে মানুষের জীবনে শান্তি-স্বস্তি নিশ্চিত করেছিল।
একটি সমাজে তখনই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব যখন সে সমাজের মানুষের মধ্যে ক্ষমা, সহনশীলতা, উদারতার মতো মহৎ গুণ থাকে। আল্লাহ নিজে উদার, সহনশীল ও ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যেও উদারতা পছন্দ করেন। তাঁর বাণী- ‘যে স্বীয় মনের সংকীর্ণতা থেকে নিজেকে রক্ষা করলো সেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করলো’। তিনি আরো বলেন- ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়।
কিন্তু কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তাহলে তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়’। ‘তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়’- আল্লাহর পক্ষ থেকে এতো বড়ো প্রতিশ্রুতির পর কেউ কি প্রতিশোধ গ্রহণের চিন্তা করতে পারে? মারামারি-ফ্যাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুনো -খুনি শয়তানের খুবই পছন্দ। তাই শয়তান শুধুই উস্কানি দেয়।
ক্ষমা ও উদারতাকে শয়তান দুর্বলতা বলে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য প্ররোচনা দেয়। এ অবস্থায় আল্লাহ বলেন- ‘শয়তানের প্ররোচনা অনুভব করলে তোমরা আল্লাহর আশ্রয় চাও’। রসুল সা.-এর বাণী খুবই প্রেরণাদায়ক – ‘যে তার ভাই-এর অপরাধ ক্ষমা করে দিবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন’। আবার আরো বলেছেন- ‘যে তার ভাই-এর দোষ গোপন করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন’।
এমন কি ব্যক্তিকে তার অপরাধ শাসকের কাছে প্রকাশ করে শাস্তি ভোগ করার চেয়ে তা গোপন করে আল্লাহর কাছে তওবা করে সংশোধিত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। এরূপ উদার ও সহনশীল সমাজে অপরাধ প্রবণতা কখনই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।