মৌলিক চাহিদা পূরণ না-হওয়া হল মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। দারিদ্র্য বা বৈষম্য তবু মানা যায়, অতিদারিদ্র্য নয়। তাই এমডিজি ও এসডিজি দিয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে মানবজাতির ‘এক নম্বর লক্ষ্য’ অর্জন: ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বত্র সবধরনের দারিদ্র্যের অবসান। স্লোগান হিসাবে জনপ্রিয় হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মানেই দারিদ্র্য বিমোচন নয়, তাহলে ইউরোপ-আমেরিকায় গৃহহীন লোকের জন্য খাদ্য-ট্রাক চলত না। আর দুর্নীতি দারিদ্র্যের বড় কারণ নয়, ক্ষুদ্রঋণ মুখ্য সমাধান নয়। তাহলে তো দক্ষিণ কোরিয়ায় দারিদ্র্য থাকত, বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে যেত।
পৃথিবীর বৈষম্য কিছুই কমেনি? কমেছে। মধ্যবিত্ত বেড়েছে, শ্রমিক অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে, মজুরিবিহীন কাজ কমেছে। মেয়েরা এগিয়েছে, যদিও অনেক নারী-শিশু এখনো নামমাত্র পয়সায় কাজ করে। তবে প্রকৃতিতেও ধনী-গরিব আছে, প্রকৃতিই মনে হয় সমতা চায় না। একই গাছের সব আম কি সমান হয়? সব মানুষের মেধা দক্ষতা শক্তি সমান নয় কেন? প্রাচুর্যের সাথে প্রকৃতির একটি বিরোধও আছে। জাপান কোরিয়া ইটালি, সম্প্রতি চীনে, জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ প্রাচুর্য।
কান পাতলেই প্রাচুর্যের কোলাহলে দারিদ্র্যের হাহাকার শুনতে পাই। শক্তিমানের পাশেই টিকে থাকে হীনদুর্বল, প্রাচুর্যের প্রতিবেশী হয় দারিদ্র্য। এনজিও কর্তৃক ‘দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর’ যত তত্ত্ব পরিমাপক কর্মসূচি নেয়া হোক এবং সরকারিভাবে ক্ষমতায়ন শিল্পায়ন কর্মসংস্থান ভর্তুকি ভাতা বা জাকাতের ব্যবস্থা হোক, তাতে ‘অতিদারিদ্র্য’ কমানো গেলেও ‘দারিদ্র্য’ রয়ে যাবে পৃথিবীর সর্বত্র সর্বকালে।
আমি নিশ্চিত অন্যায় অবিচার অশিক্ষা কিছুটা কমতে পারে কিন্তু পৃথিবী থেকে দারিদ্র্য বৈষম্য সংঘাত যাবে না, যেতে দেবে না কিছুলোক–কোনোদিন না। দেশ-জাতি-গোষ্ঠী-সময় নির্বিশেষে দারিদ্র্য বিরাজমান থাকবে চিরকাল, এজ ইউজুয়াল। কিচ্ছু করার নেই। ইবলিস যদি স্বয়ং বিধাতাকে রাজি করাতে পারে, আমি তো সেখানে মানুষ, নানা দুর্বলতায় নড়বড়ে মানুষ!
প্রকৃত মুক্তবিশ্ব হলো সেই বিশ্ব, যা অজ্ঞতা আধিপত্য দারিদ্র্য ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত। আছে কোথাও? মন খারাপ হলেও ভাবলাম, এটাই স্বাভাবিক–এজ ইউজুয়াল।