আমরা যদি মারা যাই বা আমাদেরকে হত্যা করা হয় তখন আমরা কোথায় যাব? সবাই সমস্বরে বলবেন, কেন- আমরা তো আল্লাহরই কাছে ফিরে যাব। আমরা তো প্রতিনিয়তই পড়ি- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন।’ আমার দাদা-দাদী, নানা-নানি আরো কতো আত্মীয়-স্বজনকে নিজ হাতে কবর দিয়েছি। তাই আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার (মৃত্যুর) ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারো কোনো সন্দেহ ও সংশয় নেই।
আল্লাহর কাছে ফিরে যাব। একজন বিশ্বাসী বান্দা আল্লাহকে জানে ও অনুভব করে তার অভিভাবক, বন্ধু ও দরদী হিসেবে। পিতামাতা দরদী, স্বামী-স্ত্রী পরস্পর দরদী- এটা যেমন সত্য সাথে সাথে এটাও ঠিক আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য সবার চেয়ে বেশি দরদী। বান্দার প্রতি আল্লাহর দরদ ও ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই, এই ভালোবাসার কোনো সীমা-পরিসীমাও নেই। এখন কোনো সন্তানকে যদি বলা হয়- তুমি তোমার বাবা-মার কাছে ফিরে যাবে? সে তখন লাফিয়ে উঠে বলবে- হ্যাঁ, কেন নয়? ঠিক তেমনি আমরা তো আল্লাহর কাছে ফিরে যাব মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি দরদী আল্লাহ আমাদের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহারটাই করবেন। আমরা জান্নাতের প্রত্যাশা করি, তা তো মৃত্যুর পরেই লাভ করা সম্ভব। তাই মৃত্যুভীতি মুসলমানের নেই। মৃত্যুর সাথে সাথে একজন মুসলমানকে ফেরেশতারা অভিবাদন জানাতে থাকবে। সে বড়ই ভাগ্যবান।
পক্ষান্তরে কাফের (আল্লাহর নাফরমান) বড় দুর্ভাগা। আল্লাহ, আখেরাত এসবে তার কোনো বিশ্বাস নেই। মৃত্যুকে সে ভীষণ ভয় পায়। ফেরেশতারা টেনেহিঁচড়ে তার জানটা কবজ করবে। সে থাকবে ভীত-সন্ত্রস্ত। মানুষের প্রতি জুলুম-নির্যাতনে তার জুড়ি নেই। এরা আল্লাহর অভিশপ্ত, মানুষেরও অভিশপ্ত।
আমাদের সৃষ্টি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, তোমরা শ্রেষ্ঠতম উম্মত, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজে নিষেধ করবে। কোনো মুসলমানের দ্বারা কারো ক্ষতিসাধন- এটি অকল্পনীয়, অসম্ভব, হতেই পারে না। রসুলল্লাহ সা.-এর উক্তি স্মরণযোগ্য – ‘ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়’। মুমিন সেই যার থেকে আল্লাহর সকল সৃষ্টি নিরাপদ। মুসলমানদের প্রতি যারা অন্যায় দোষারোপ করে ও জুলুম-নির্যাতন করে তারা আর মুসলমান থাকে না, হয়ে যায় আল্লাহর দুশমন ও শয়তানের দোসর।
যারা মুসলমান হয়ে থাকতে চায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে ও জান্নাতের প্রত্যাশা করে তাদের কাজ হলো মানুষকে ভালো কাজে (আল্লাহর দিকে) আহবান জানানো ও মন্দ কাজে বাধা দেয়া। এই কাজ করতে গেলে তাকে বাধার সম্মুখীন হতেই হবে। যেমনটি হয়েছিলেন মুহাম্মাদ সা. ও সকল নবি-রসুল। কেউ যদি নির্ভেজাল আল্লাহর জন্য কাজটি করে তাহলে বিশ্বাস করুন দলীয় ক্যাডার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কেউ নির্যাতন করুক না কেন- তারা কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে নয়, বরং যাঁর প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই মহান আল্লাহর সাথেই করছে। বিষয়টি আল্লাহর ওপরে ছেড়ে দিয়ে ব্যক্তি বা সমষ্টির উচিৎ ঝামেলা মুক্ত হয়ে কেবল ইতিবাচক কাজই করতে থাকা। প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
আমরা কবিতা পড়েছি, হাশরের দিন বিচারে বসিয়া সুধাবে জগৎ স্বামী তুমি মোরে করো নাই সেবা — – –। এটি আসলে কবিতা নয়, হাদিসের বাণী। মানুষকে খাওয়ালে আল্লাহকে খাওয়ানো হয়, মানুষকে সেবা দান করলে আল্লাহকে দেয়া হয়। কারণ মানুষ তো তাঁরই প্রতিনিধি। তাই আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে অন্যায়ভাবে আঘাত করা হলে সেটি তো আল্লাহকেই করা হয়। যেমন একজন পুলিশকে আঘাত করা হলে আইজিপি মহোদয় মনে করেন, এটা তো আমাকেই আঘাত করার শামিল। দ্রুত তাকে আইনের আওতায় আনা হয়। পড়েছিলাম (কার বাণী মনে নেই), যত প্রকারের পাপ আছে, মানুষের চিত্তে ব্যথা দেয়া সবচেয়ে বড় পাপ, এ মহাপাপ কেউ করো না। আর আল্লাহর বাণী কত স্পষ্ট ও ভয়াবহ – ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে’- সুরা হুমাজা। একটু গালি দিলে ও দোষ প্রচার করলে যদি ধ্বংস নিশ্চিত হয় (তাদের জন্য হুতামা দোযখ) তাহলে মানুষকে হত্যা করা ও গুম করার পরিণতি কী হতে পারে?
প্রতিশোধ গ্রহণ আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। এই দুনিয়ায় তিনি চান তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে। শাস্তি দেয়ার জন্য আল্লাহর সামনে অঢেল সময় (আখেরাতে) রয়েছে। দুনিয়ার জীবনে তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। সাথে সাথে আল্লাহর যে সব বান্দা অপরকে ক্ষমা করবে তাদেরকে ক্ষমা করা তিনি তাঁর নিজের জিম্মায় নিয়েছেন।
আসুন, আমরা পাপাচারের পথ পরিহার করে সর্বদা নেক আমল করি, মানুষের সাথে সদাচরণ করি ও ক্ষমা করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে যাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায়তা করুন। আমিন।