অর্থনীতিতে পাঠদানের সময় শিশু শিল্প সংরক্ষণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে এমনভাবে বলতাম। সংরক্ষণ হিসেবে কর মওকুফ, ভর্তুকি প্রদান, আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রে নানাবিধ সুবিধা প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানার সাথে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বা শিশু শিল্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টেকা একটু কঠিনই। এই সুবিধা প্রাপ্তির ফলে অনেক সময় দেখা যায়, তাদের শৈশব আর কাটে না বা যৌবন প্রাপ্তিও হয় না। তাই অর্থনীতিবিদরা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুবিধা দেয়ার পক্ষে।
ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রয়োগ হওয়া উচিত এবং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিও তাই। জন্মগ্রহণের পর মানবশিশু সবচেয়ে অসহায় হয়ে থাকে। আল্লাহপাক দুটি বছর তার মা’র দুধপান হক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এর পরবর্তী শিশুকাল তার জন্য বিপদজনক এবং এই সময়টা তাকে গড়ে তোলার সময়। নৈতিকতা শিক্ষাদান এবং স্বাবলম্বি করার লক্ষ্যে লেখাপড়ার সাথে নানাবিধ কাজে তাকে অভ্যস্ত করাতে হয়। ৭/৮ বছর বয়সে বিছানা আলাদা করে দেয়া ও নামাজে অভ্যস্ত করার জন্য হাদিসে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
শিশুকালটা একজন মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাতাপিতার ভূমিকাটাই মুখ্য। অতি আদর ও অতি শাসন দুটোই শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক বাবা-মা সন্তানকে কোনো কাজই করতে দেন না। এই জাতীয় শিশুদের বয়স বাড়ে কিন্তু তারা সেই অনুপাতে পরিপক্ব (Adult) হয় না। এরা হয় নির্ভরশীল এবং নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারপরও তাদেরকে ফ্রি করে দিতে হবে। ভুল-ভ্রান্তি ও ঘাত- প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে পরিপক্বতা আসবে। মানুষ ভুল থেকে শেখে। সন্তানকে কাজে লাগাতে হবে, উৎসাহ দিতে হবে, ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করতে হবে এবং শোধরায়ে দিতে হবে। তাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করতে হবে।
আমাদের জীবনটা বড় সংকীর্ণ। বরফগলার মতো দ্রুতই আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই দুনিয়া কর্মবীর বা কর্মপাগলদের। অলসদের কোনো জায়গা নেই। ওমর রা.-এর উক্তি, যে কাজ করে না তার খাওয়া অন্যায়। কাজের কোনো শেষ নেই এবং জানাশোনারও শেষ নেই। কোনো কাজই অবহেলার নয় বা লজ্জার নয়। লজ্জা হয় অসততায় ও অলসতায়। আমাদের জ্ঞান ও জানাশোনা এতো স্বল্প যে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। হ্যাঁ, এতে কোনো ভুল নেই। ভলতেয়ারের উক্তি, প্রতিভা বলে কিছু নেই, পরিশ্রম করো, সাধনা করো প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।
জীবনে বড় হতে চাইলে আত্মবিশ্বাস (নিজের প্রতি বিশ্বাস) থাকতে হবে। মা বলেছেন, আমি পারবো। হ্যাঁ, সেই ছেলে/মেয়ের বিশ্বাসই তাকে এগিয়ে দিবে। তাই নিজের ওপর আস্থা রেখে কেউ যদি প্রচেষ্টা চালায় আল্লাহ তাকে কামিয়াব করবেন। এটি আল্লাহর নিয়ম। আল্লাহপাক কোনো প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টা নস্যাত করেন না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেজন্য দরকার প্রচেষ্টা ও ধৈর্য। আল্লাহরই কথা, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। হতাশ হতে নেই। বিশ্বাসী বান্দা কখনো হতাশ হয় না।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তরুণদের মাঝে কর্মপ্রেরণা দান করুন ও জীবনে সফলতা দান করুন।