Site icon World 24 News Network

রাতজাগা পরিহার করি এবং কর্মময় জীবন উপভোগ করি

লাইফ স্টাইল

ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকেই আমার একান্ত প্রিয়ভাজন প্রকৌশলী মঞ্জুরুল করিমসহ (তাঁর স্ত্রী একজন ডাক্তার, আমরা একই বিল্ডিং-এ থাকি) মর্নিং ওয়াক শুরু করি। হাঁটতে গিয়ে নানা বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে আলোচনা হয়। সমাজ, সামাজিকতা, ধর্ম, পরিবার, রাজনীতি কোনো কিছু বাদ যায় না। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল লাইফ স্টাইল।

তাঁর কথা, আমরা আনন্দ পেতাম আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়ানোর মধ্যে। তাঁর পিতা সরকারি চাকরি করতেন। রাঙামাটিতে পোস্টিং। রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ দেখাতে তাঁর বাবা নিয়ে যাননি কিন্তু দুঃসম্পর্কের এক ফুফুর বাসায় নিয়ে গেছেন। অথচ আমাদের সন্তান এখন আর আত্মীয়স্বজনের বাড়ি নয় তারা ঘুরতে চায় রিসোর্টে। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়ানোর মধ্যে রয়েছে সওয়াব ও বিনোদন।

তিনি একটা লেকচার শোনা প্রসঙ্গে বলেন, ওমর রা. সব্জি নয় মাছ-গোশত পছন্দ করতেন। আমিষ পরিহার করে শাক-সবজি বেশি খাওয়ার মধ্যে কিছু সত্যতা থাকলেও বেশি রয়েছে ব্যবসায়িক প্রোপাগাণ্ডা। দূর্বাঘাস উঠিয়ে এনে ভালো করে বেলেন্ডার করে হয়তো বলছে স্বাস্থ্যসম্মত জুস, দাম ৩০০/- টাকা।

আসলে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন আমাদের লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনা। মুসলমানদের আলাদা কোনো লাইফ স্টাইল নেই। রসুলুল্লাহ সা.-এর জীবন যাপনের মতো জীবন পরিচালনাই আমাদের লাইফ স্টাইল। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবি সা.-কে অনুসরণ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন।

নবি মুহাম্মদ সা. পরিচ্ছন্ন কিন্তু সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। হালাল সকল জিনিস তিনি খেতেন। তবে পেটপুরে নয়। ক্ষুধা থাকাবস্থায় খাওয়া শেষ করতেন। তিনি আমাদের মতো রাত জাগতেন না। অথচ তিনি খুব ব্যস্ত মানুষ। একাধারে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, প্রধান বিচারপতি, সেনানায়ক – এককথায় তিনিই সব। কিন্তু এশার পরে জেগে থাকা বা কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না। তিনি তাঁর পরিবারকে সময় দিতেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। ফজরের নামাজ পড়ে তাঁর কর্মব্যস্ততা শুরু হতো। তিনি দিনকে কর্ম সম্পাদন এবং রাতকে বিশ্রাম ও পরিবারের জন্য নির্ধারণ করেছিলেন। এটিই তাঁর সুন্নাত। তিনি তাঁর মহান মালিকের কাছে উম্মতের জন্য দিনের অগ্রভাগের কল্যাণ কামনা করেছেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি জামায়াতের সাথেই আদায় করেছেন। এব্যাপারে তিনি নিজে কোনো শৈথিল্য দেখাননি এবং তাঁর অনুসারীদেরও সুযোগ দেননি। তিনি বলেছেন, মসজিদে আসার ক্ষেত্রে প্রতি কদমে নেকি। ফলে যে যতো দূর থেকে আসবে তার সওয়াবের পরিমাণও বাড়বে। এই নামাজ মানুষকে আলোস্য থেকে দূরে রাখে এবং সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তী করে। নামাজ সুস্বাস্থ্যের বড় নেয়ামক হিসেবে কাজ করে।

নবি মুহাম্মদ সা. নিজের কাজ নিজেই সম্পাদন করতেন। কোনো কাজকে ছোট ভাবতেন না। কর্ম- চঞ্চলতা ও সুস্থতা পরস্পর অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। আপনাকে হয় হাঁটতে হবে নয়তো খেলাধুলা করতে হবে নয়তো গৃহের সকল কর্ম সম্পাদন করতে হবে। রসুল সা. গৃহকর্মে তাঁর স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। স্বাভাবিক ডেলিভারি না হয়ে এত সিজারিয়ান বেবি প্রসঙ্গে যশোরে ডা. শাহাবুল (তারা স্বামী-স্ত্রী ডাক্তার) বলেছিলেন, ভাই- আমাদের মা-দাদিরা ধান ভানিছে, যাঁতা পিষেছে আর ব্যথা উঠেছে, স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করেছেন।

পৃথিবীতে আমাদের জীবনটা খুবই ক্ষণিকের। বড়জোর ৮০/৯০ বছর। এই সময়টা কাজ করার সময়। আলী রা. কথা, ঘুমানো বা বিশ্রামের জন্য কবরে অফুরন্ত সময়। দুনিয়া কর্মক্ষেত্র। তাই পরিশ্রমী হতে হবে। শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম যে যত বেশি করবে সে ততবেশি সুস্থ থাকবে। আমরা জানি, নবি মুহাম্মদ সা.-এর কলিজার টুকরা মেয়ে ফাতিমার কোনো কাজের লোক ছিল না। যাঁতা পিষতে গিয়ে হাতে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। বাবার কাছে একটি দাসী চেয়েছিলেন। তিনি দাসী দিতে পারেননি। দিয়েছিলেন তিন তাসবিহ- সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার। এ প্রশ্ন উঠতেই পারে তিন তসবিহ পড়ায় বেশি সওয়াব না নিজ হাতে কাজ করার মধ্যে বেশি সওয়াব।

তাই আসুন, আমরা রাতজাগা পরিহার করি এবং কর্মময় জীবন উপভোগ করি। আল্লাহ আমাদেরকে পরিশ্রমী হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Exit mobile version