Site icon World 24 News Network

দুঃখ-দারিদ্র্যের অনন্ত ধারা–এজ ইউজুয়াল! (পর্ব- ১)

দারিদ্র্য কত প্রকার ও কি কি?

রাজনীতি থাক, অর্থনীতি নিয়ে কিছু বলি। মানবজীবনে দুটি ধারা পাশাপাশি চলে: প্রাচুর্য-উপভোগ এবং দারিদ্র্য-দুর্ভোগ। শক্তি দম্ভ শোষণ অপচয় একদিকে, অন্যদিকে দুঃখ বঞ্চনা লাঞ্ছনা। কার জীবনে কোনটি কতখানি এসে পড়বে তা অনিশ্চিত বলেই অর্থসম্পদ জমায় কিন্তু লাভ হয়? সুখ-দুঃখের এপারে ওপারে মানুষ ছুটাছুটি করে।
দারিদ্র্য কত প্রকার ও কি কি? সাধারণত দুভাবে দেখা হয়: চরম দারিদ্র্য–জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম এবং আপেক্ষিক দারিদ্র্য–তুমি তার চেয়ে গরিব। এই যে তুলনামূলক দারিদ্র্য, ‘আমি তোমার চেয়ে গরিব’–এখানে ‘আমি’ বা ‘তুমি’টা কে? আমি কার চেয়ে বেশি গরিব? মনে করলেই গরিব, আমলে নিলেই দুঃখ, গণনা করলেই গড়মিল।
আবার কবি নজরুলের মতো অনেকের ভাবনায় দারিদ্র্য একটি ‘মহান’ ও গৌরবের বিষয়। হিন্দু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে পূর্ণমুক্তি তথা মোক্ষলাভের জন্য দারিদ্র্যভোগ একটি প্রয়োজনীয় গ্রহণযোগ্য শর্ত। কারো মতে সাম্যের চেয়ে বৈষম্যই বেশি সৃষ্টিশীল। দারিদ্র্য-শোক-বিরহ হল পেষণযন্ত্র–কলু কুঠার তলোয়ার–সকল রিপু হনন করে, পিষে বের করে বিষ, তারপর আনে অমৃত। অ-সুখ এবং দারিদ্র্য কাছাকাছি হলেও ভাই নয়। সেজন্যই সকল অসুখী দরিদ্র্য নয়, সকল ধনী সুখী নয়, সবাই সর্বক্ষণ সুখী বা দুঃখী নয়।
প্রত্যেকটা মানুষেরই কোনো একটায় অভাব অপূর্ণতা দরিদ্রতা আছে, যা প্রকাশ পায় বিভিন্ন রূপে: ধনে জনে মানে বচনে বসনে, কর্মে ধর্মে ক্ষমতায়, অগৌরব অশান্তি পরাধীনতায়। অঢেল সম্পদে ভরপুর থেকেও সুখের নাগাল না পেতে পারে, অনেকেই প্রাচুর্যে বসে দারিদ্র্যে বসবাস করে–দুঃখ যেমন উঁকি মারে সুখের কিনারে। অর্থের যথার্থ ব্যবহার না জানলে দারিদ্র্যের আগুনে পুড়তে পারে। মনের দারিদ্র্য সবচেয়ে কঠিন ব্যাধি। কার্পণ্য শুধু নয়, হিংসা বিদ্বেষ পরশ্রীকাতরতা কুরুচি মানুষকে দরিদ্র বানিয়ে রাখে স্বভাবে আচরণে চিন্তায়।
অর্থাৎ, দারিদ্র্য শুধু আর্থিক নয়, মানসিক এবং সাংস্কৃতিক দারিদ্র্যও দুর্বিষহ হতে পারে।
(চলবে)
Exit mobile version