ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব অসীম। ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কোনো না কোনোভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকি। সমাজের যে স্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি, সে স্তরে এখনো উন্নতি সম্ভব হয়নি। তাই বলা যায়, সভ্যতার উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাবহারের ক্ষেত্রসমূহ হলো
ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রক্ষা করি। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করাসহ জিপিএসের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করতে পারছি। টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইলের মাধ্যমে বিনোদন লাভ করি। পার্ক, জাদুঘর, সিনেপ্লেক্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ই-বুক ব্যবহার করে বই পড়ি। অনলাইনে ক্লাস করতে পারছি। মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস করার ফলে আমাদের পড়া বোঝা আরো সহজ হয়েছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পরীক্ষার ফল জানতে পারছি। অনলাইন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে ঘরে বসেই চাকরির দরখাস্ত করা যায় এবং পরীক্ষার প্রবেশপত্র অনলাইন থেকে প্রিন্ট করা যায়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়। ইন্টারনেটে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ডার দেওয়া ও বিল পরিশোধ করা যায়। অনলাইন টিকেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ঘরের বাইরে বা স্টেশনে না গিয়েই ট্রেন ও প্লেনের টিকিট কেনা যায়। বড় বড় তথ্য, যেগুলো আমাদের জায়গাবহুল মনে করি, সেগুলো আমরা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে পারি, যা অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তিনির্ভর এবং এই নির্ভরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম্পিউটারনির্ভর ইন্টারনেট প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সমগ্র বিশ্ব এখন এক গ্লোবাল ভিলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার তথ্যের সমাবেশের ফলে তৈরি হচ্ছে তথ্যজট। মানুষের নিজের পক্ষে সব তথ্য মনে রাখা বা হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব নয়। উপযুক্ত তথ্য পাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সম্প্রতি কভিড-১৯-এর কারণে প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। মহামারি পরিস্থিতে মানুষ গৃহবন্দি থাকলেও ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু ছিল। বহির্বিশ্বের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কভিড-১৯ সম্পর্কে সচেতন হয়েছে এবং এর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জেনেছে। অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে অসহায় দুস্থ মানুষের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা সহজ হয়েছে। যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির কারণে শিক্ষার্থীরা বাসায় থেকে অনলাইনে পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বহুসংখ্যক তরুণ অনলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করছে। এর ফলে নিজস্ব প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে, কমেছে বেকার।
দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তথ্য ও প্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অনেক ভালো দিকের সঙ্গে রয়েছে কিছু নেতিবাচক বিষয়। তবে চেষ্ট থাকবে এর ব্যবহারকে ইতিবাচক দিকে রাখতে। এর অপব্যবহার রোধ করে তথ্য-প্রযুক্তিকে করতে হবে মানবসভ্যতার উন্নয়নের সোপান।