মিশরের প্রাচীনতম রাজপথ সংস্কার করে জমকালো উদ্বোধন করা হলো

সিংহ-মানব ও মেষ-ভাস্কর্যের রাজপথ পুনরুদ্ধারে লেগেছে সাত দশকেরও বেশি সময়

গত ২৫ শে নভেম্বর, ২০২১ মিশরের পর্যটন ইতিহাসে ঘটে গেল যুগান্তকারী এক ঘটনা। মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির উপস্থিতিতে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রাচীনতম রাজপথ পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হল। আর এই উপলক্ষে মহা ধুমধামের মধ্যে এই র‍্যামস রোডটি সারা বিশ্বের পর্যটক ও সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

আসলে এটি Upper Egypt এর “লুক্সর” (LUXOR) শহরের একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক রাজপথ। আরবিতে طريق الكباش, ইংরেজিতে Avenue of Sphinxes or The King’s Festivities Road,‏ ফরাসি ভাষায় Allée des sphinx যা Rams Road নামেও পরিচিত। বাংলায় অনুবাদ করলে হবে সিংহ-মানব ও মেষ-ভাস্কর্যের রাজপথ। আমরা স্ফিংস সরণি বা আবুল হোল এভেনিউ বলতে পারি। মূলতঃ স্ফিংস বা সিংহ-মানব ভাস্কর্য (أبو الهول) একটি মিসরীয় পৌরাণিক প্রাণীর মূর্তি। যা গীজার পিরামিডের প্রস্থান্মুখে পাথরে খোদাই করা একটি শক্তিশালী স্মৃতিস্তম্ভ, এর দেহটি দেখতে সিংহের মতো আর মাথাটি মানুষের মতো।

রাস্তাটি প্রায় ৩,৫০০ কারো কারো মতে ৪,০০০ বছরের পুরানো, 2.7 কিঃমিঃ দীর্ঘ, 250-ফুট বা প্রায় 75 মিটার প্রশস্ত যা কার্নাক উপাসনালয়কে এবং লুক্সর উপাসনালয়ের সাথে সংযুক্ত করেছে, যা প্রাচীন ধর্মীয় শহর ‘মাদিনাতু তীবাহ’ বা থিবেসে আবিষ্কৃত হয়েছিল। সিংহ-মানব ও মেষ-মাথার ভাস্কর্যে রাস্তার দুই পাশ সারিবদ্ধ। প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই পথটিকেই আবার যত্ন করে সংস্কার করে উদ্বোধন করা হল।

অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই, তিনটি বিশেষ নৌকা ফ্যারাওনিক শৈলীতে ডিজাইন ও প্রস্তুত করা ছিল। নীল নদের অবারিত বুকে চকচকে আলোর পানিতে ভাসছিল। এই নৌকাগুলি থিবেসের পবিত্র ট্রিনিটির প্রতীক হিসাবে নীল নদে সাজানো হয়েছিল। প্রাচীন সূর্য দেবতা আমুন রা, চাঁদের দেবতা খোনসু এবং মাতৃদেবী মোতকে উৎসর্গ করা ফেরাওনিক মডেলের তিনটি সোনালী নৌযানকে নিখুঁত উজ্জ্বল সোনা খচিত কালো রঙয়ের বিশেষ পোশাকে সজ্জিত পুরুষরা বহন করছিল।

 

আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভব সব ডিজিটাল সিস্টেমে প্রাচীনকালের মিশরীয়দের এবেত উৎসব উদযাপনের প্রতীকী আদল অনুকরণ করার প্রচেষ্টার লক্ষ্য করা গেছে। পুরোহিতরা বছরে দুবার এই আচার অনুষ্ঠানগুলি সম্পাদন করত, প্রথমটি ফসল কাটার উৎসবে এবং দ্বিতীয়টি রাজার সিংহাসন আরোহণের উৎসবে। এইজন্যই এই রাস্তাকে রাজকীয় শোভাযাত্রার রাজপথ বলা হয়। সেইসাথে এটি ইতিহাসের প্রাচীনতম আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় রাস্তারও মর্যাদা পায়।

মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি লুক্সর শহর ব্যাপী এই প্রদর্শনীতে স্বপরিবারে অংশ নেন। সাথে ছিলেন রাষ্ট্রের বিশেষ মেহমান ও ৩৩ এরও বেশি দেশের সম্মানিত রাষ্ট্রদূতগণ। অনুষ্ঠানটি মিডিয়া কাভার করতে উপস্থিত ছিলেন ২০০ বেশী সংবাদ মাধ্যম। প্রখ্যাত মিশরবীদ জাহী হাওয়াস লুক্সর সাইটটিকে- “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত জাদুঘর, বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল, যা একাদশ রাজবংশ নামে পরিচিত ২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে – রোমান সময়কাল পর্যন্ত মিশরের ইতিহাসের বাস্তব নিদর্শন” বলে অভিহিত করেছেন৷

ঈসা আহমাদ ইসহাক

সহযোগী সম্পাদক : নিউজ বিভাগ এবং প্রধান অনুবাদক: আরবী বিভাগ

এই বিভাগের আরো সংবাদ

Back to top button