মক্কার ফুল কায়রোর বাগানে !
মসজিদে সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ)
মিশরের রাজধানী কায়রো ডেড সিটিতে চির নিদ্রায় শায়ীত আছেন নবী মোহাম্মদ (সাঃ) পরিবারের সদস্য সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ) বিনত আল-হাসান ।
তিনি হিজরী ১৪৫ সনের ১১ রবিউল আউয়াল তারিখে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। এবং ১৯৩ হিজরীতে মিশরে আসেন। তার পিতার নাম আল-হাসান আল-আনওয়ার। যিনি ছিলেন তৎকালীন মদীনার গভর্নর।
সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ) ছিলেন একজন প্রখ্যাত মুসলিম বিদূষী নারী, যিনি ইমাম শাফি (রাঃ) শিক্ষক হিসাবে সমধিক পরিচিত। তিনি অত্যন্ত সংযমী জীবনযাপন করতেন। তার ভাগ্নী জয়নাব (রাঃ) সাক্ষী দিয়েছিলেন যে, তার খালা ৩ দিন অন্তর একবার খেতেন এবং তার কাছে একটি খালি ঝুড়ি রাখতেন। প্রতিবার যখন তিনি ছোট কিছু খেতে চাইতেন, তখন তিনি তার হাত ঝুড়ির ভিতরে ঢুকাতেন এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রেরিত কিছু পাওয়া যেত সেই ঝুড়িতে।
একবার জয়নাব (রাঃ) তার খালাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনার নিজের যত্ন নেওয়া উচিত”। এর জবাবে তিনি জবাব দিয়েছিলেন “আমার পালনকর্তার কাছে পৌঁছানোর আগে আমি কীভাবে নিজের যত্ন নেব? আমার সামনে এমন অনেক বাধা রয়েছে যা সফলদের ব্যতীত আর কেউ পার করতে পারে না।
রাজধানী কায়রোতে তার বসতি স্থাপনের পর, তার প্রতিবেশী অমুসলিম পরিবারের পক্ষাঘাতগ্রস্ত কন্যাকে নিরাময় করার এক অলৌকিক ঘটনা ঘটল। একদিন মহিলাটি তার পক্ষাঘাতগ্রস্ত কন্যাকে সাইয়্যেদা নাফিসার কাছে রেখে বাজারে যান। যখন সাইয়্যেদা নাফিসা নামাযের আগে ওযূ করলেন, তখন কয়েক ফোঁটা পানি সেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়েটিকে স্পর্শ করলে সে হাঁটতে শুরু করল। সাইয়্যেদা নাফিসা যখন নামাজ আদায় করেতে ছিলেন, তখন কন্যাটি উঠে দাঁড়িয়ে তার মায়ের কাছে ছুটে গেলেন।
এই অলৌকিক ঘটনাটির পরে, পুরো পরিবার এবং অন্যান্য প্রতি বেশীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তার মৃত্যুর পরে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল! কিছু চোর তার মাজার মসজিদে প্রবেশ করে ১৬টি রূপার বাতি নিয়ে যখন পালাতে চেষ্টা করতেছিল, তখন দরজা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় এবং তারা আটকা পড়ে যায়। পরের দিন সকালে তাদের পাকরাও করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ) বিনত আল-হাসান হিজরি ২০৮ সনের ১৫ রমজান পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় কায়রোতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর, তার স্বামী তাকে জান্নাতুল বাকী’তে দাফন করার জন্য মদিনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, মিশরীয়রা বিষয়টি জানতে পেরে গভর্নর আবদুল্লাহ ইবনে আল-সারি ইবনে আল-হাকামের কাছে ছুটে যায় এবং তারা তার স্বামী ও গভর্নর আবদুল্লাহ কাছে অনুরোধ জানান যেন তাকে মিশরে দাফন করা হয়। সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ)র স্বামী তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে মিশরীয়রা খুব দুঃখ পান । কিন্তু পরের দিন সকালে মিশরীয়রা তাকে তাদের ইচ্ছার কথা সাড়া দিতে দেখে অবাক হন এবং তার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেছিলেন: আমি রাসূল (সাঃ) কে স্বপ্নে নির্দেশ দিতে দেখেছি, মিশরেই যেন তাকে দাফন করা হয়।
ফাতেমীয় খলিফা আল-মুস্তানসির বিল্লাহ নির্দেশে ৭১৪ হিজরিতে সমাধীর পাশে একটি মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। গত কয়দিন আগে আমরা গিয়েছিলাম সাইয়্যাদা নাফিসাহ (রাঃ) বিনত আল-হাসান এর কবর জিয়ারত করতে। তার কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।