আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর শহর মদীনা মুনাওয়ারায় জান্নাতের বাগানে বিশ্রাম নিচ্ছেন আল্লাহর ইচ্ছায়। এখন তিনি সরাসরি আমাদের সামনে দৃশ্যমান নাই।
৫৭০ সাল থেকে মানব ইতিহাসের ৬৩ টি বছর সবচেয়ে বেশী সৌভাগ্যবান ছিল, যেসময়টুকু তিনি সরাসরি আরবের জনমানুষ ও সাহাবায়ে কেরামের সাথে ছিলেন এই জামিনেরই উপর। ৬৩২ সালের পর থেকে তিনি আর আমাদের মাঝে সাধারণভাবে জীবিত নেই।
তাই বলে কি আমরা শুধু শোকে মুহ্যমান থাকব? তাঁর আগমন কে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করব না! তাঁর অনুপস্থিতিতে উদ্যমহীন উদ্যোগ বিহীন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন জাতিতে পরিণত হব?! না মোটেও না।
হ্যাঁ অবশ্যই, তাঁর বিয়োগব্যাথায় আমরা সবাই ব্যথিত ও কাতর আছি। হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি তাঁর তিরোধানের প্রভাব। সাহাবায়ে কেরাম তো মানতেই পারছিলেন না তাঁর ওফাতের সংবাদ। অবশেষে প্রায় তিন দিনের একক ইমাম ছাড়া জানাযা নামায শেষে আল্লাহর নির্দেশেই রওজা মুবারকেই তিনি আছেন, চির অমর হয়ে। তারপর থেকে, উম্মতের আমরা সবাই সর্বদা তাঁকে যিয়ারত করে চলছি সবসময়ই। তিনি আর আমাদের মাঝে চলাফেরা করছেন না, কিন্তু আমরা নিরন্তর তাঁর পাশেই আছি। তাঁকে উদ্দেশ্য করে যাতায়াত করছি নিয়মিত;…
জীবন-মৃত্যুর এই পৃথিবীতে সবার জন্যই আল্লাহ তা’য়ালার এই সুন্নত বা নিয়ম অবধারিত। মানব সন্তানের একজনকেই এখনও সেই অর্থে স্বাভাবিক জীবনের ইতি টানতে হয় নি। যদিও দুনিয়ার নিয়মের বাইরে বিশেষভাবে তিনি আসমানে আছেন। তাঁকেও একদিন জামিনের নিচে জান্নাতের বাগানে বিশ্রাম নিতে হবে।
ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মদিন নিয়ে তাঁর ধর্মের (রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া কে নবী ও রাসূল হিসেবে না মেনে পথহারা) অনুসারীরা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। বড় দিন ২৫ ডিসেম্বর নাকি ৭ই জানুয়ারি এনিয়ে তাদের মাঝেও ইখতিলাফ আছে। তবে অধিকাংশের মতটাই বেশি প্রচারিত হয়।
অবশ্য ঈসা আলাইহিস সালাম এর জন্মের বাস্তবতাও আমাদের জানা থাকতে হবে। পিতাহীন তিনি মাতৃগর্ভে এসেছিলেন, জন্মের পর মহিয়সী মা মারিয়ম আলাইহাস সালামের কোলে নবজাতক শিশু, ‘মসীহ’ প্রমাণের কথা নিজ মুখে বলে, কুল কায়েনাতকে অবাক করে দিয়েছিলেন, মহান আল্লাহর কুদরতী ইশারায়! তিনি ছিলেন নবী ও রাসূল; তাঁর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল আসমানী কিতাব ইন্জীল শরীফ।
এরপর ৫৭০টি বছর অতিবাহিত হচ্ছিল। নেমেছিল ঘোর আঁধার। অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিল মানব সভ্যতা। ভাষা সাহিত্যের সর্বোচ্চ চর্চা সত্যেও ধার্মিক সামাজিক ও চারিত্রিক অধঃপতন ছিল নিম্নতর। বিশ্ব মানবতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল খতমে নবুওয়্যতের, আখলাকের সর্বোত্তম পূর্ণতা প্রদানের…
মা আমেনার কোল আলো করে অবশেষে তিনি আসলেন। তাঁর আগমনটাই ছিল কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। আনন্দের ও মহাখুশির। উৎসবের এ উৎসাহ ও উদ্দীপনা মানবজাতির সব দুঃখ-কষ্টকে ছাপিয়ে দিয়েছে, এমনকি তাঁর স্বাভাবিক ওফাত মোবারকের অপূরণীয় ক্ষতির ব্যাথা কেও ভুলিয়ে থাকতে দেয়! তাঁর আগমনের কারণেই আমরা পেয়েছি বছরে দু’টি ঈদের শরয়ী বিধান, শাশ্বত ও চিরন্তন মু’জিযা আল কোরআন। শোককে শক্তিতে পরিণত করার শিক্ষা পেয়েছি। বিদআত খুরাফাত থেকে দূরে থাকার দীক্ষা, তাজদীদ ও সুন্নতে হাসানাহ্ কে আঁকড়ে ধরার উৎসাহ পেয়েছি। হাদীস ও ফিক্বহের সুন্দর সমন্বয়।
জানতে পেরেছি মুমিনের প্রথম কাজ ‘পড়া’ এবং প্রধান কাজ জ্ঞান অর্জন করা ও সবশেষে ঈমান আনা। আর মুসলিম মানে আত্মসমর্পিত জীবন। জন্ম থেকে মৃত্যু সালাত সিয়াম সবটাই সেই রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত। জ্বীন ও মানবের সৃষ্টিই তো একমাত্র তাঁর ইবাদাতের উদ্দেশ্যে।
পরিশেষে, সর্বোত্তম ও সর্বোন্নত আদর্শ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভিশন ও মিশন ‘ইসলাম’ কে ব্যাক্তি জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ অনুকরণ করে প্রশান্ত চিত্তে এ পৃথিবী (ফিতনা ফাসাদে নিমজ্জিত, কিয়ামতের পথে ধাবিত) থেকে দ্রুত বিদায় নিতে পারার মাঝে রয়েছে নিশ্চিত ও নিরাপদ সফলতা।
মহান আল্লাহ চাইলে অব্যাহত এই প্রচেষ্টায় নেমে আসবে একদিন ধরার পৃষ্ঠে জান্নাতের বিশ্বায়ন। ইমাম মাহদী ও ঈসা আলাইহি মাস্ সালাম এর শুভাগমন!