Site icon World 24 News Network

ঘরের বাসিন্দার জন্য তার ঘর নিরাপদ (পর্ব-২)

মসজিদে নববী মদিনা মুনাওয়ারা

মক্কায় তেরো বছরে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ নেই, একতরফা মার খেয়েছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে যুদ্ধের কোনো অনুমতিও ছিল না। আসলে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি বা দল যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে না। মদিনায় একটি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি তাঁর সাথিদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন এবং একের পর এক বদর, ওহুদ, খন্দক ও ছোট-বড়ো নানা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কুফরি শক্তিকে পর্যুদস্ত করে দেন।

মাত্র আট বছরের ব্যবধানে তিনি দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা আক্রমণ করে বিনাযুদ্ধে জয় লাভ করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আরবের কুফরি শক্তি নির্মূল হয়ে যায়। আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ‘সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত হয়েছে; মিথ্যা দূরীভূত হবেই- বনি ইসরাইল ৮১।

বিজয় লাভের পর কোনো বিজয়োল্লাস নেই, কাউকে আঘাত করা, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া, শত্রুকে বাড়িঘরে খুঁজে বেড়ানো বা আতঙ্ক সৃষ্টি কোনো কিছুই করলেন না বরং তিনি তাঁর রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে পড়েন, তাঁর মুখে শুধুই আল্লাহর প্রশংসা- সোবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ধ্বনি। তাঁর জানের দুশমন যারা তাকে তেরোটি বছর ধরে শান্তিতে বাস করতে দেয়নি, সামাজিকভাবে বয়কট করে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট দান করেছে, মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করেছে এবং মদিনায় হিজরত করার পরেও একটু স্বস্তি না দিয়ে যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে অনেক সঙ্গী-সাথিকে শহিদ করেছে; তাদেরকে হাতের মুঠোয় পেয়ে প্রতিশোধ না নিয়ে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বললেন- যারা কাবায় আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ, যারা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ এবং যারা নিজ ঘরে অবস্থান করবে তারাও নিরাপদ। তাঁর মহানুভবতা ও ক্ষমা ছিল এক বিস্ময়।

এই উদারতা ও ক্ষমা ইসলামকে দ্রুত মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছিল এবং জাহেলি চিন্তা-চেতনা ঝেড়ে ফেলে সবাই একযোগে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাতে বাদ যায় না আবু জেহেলের ছেলে ইকরামা বা হামজা রা.-এর কলিজা ভক্ষণকারী হিন্দা। নঈম সিদ্দিকী তাঁর বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ ‘মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সা.-এর ৩৭ পৃষ্ঠায় চমৎকারভাবে বিশ্বনবি মুহাম্মদ সা.-এর মহানুভবতা তুলে ধরেছেন।

‘রসুল সা. এর কাছে এ সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট ছিল যে, যে বিপ্লব প্রতিশোধ নিতে আরম্ভ করে তা আপনা থেকেই খতম হয়ে যায়। আর যে বিপ্লব ক্ষমা ও মহানুভবতা প্রয়োগ করে, তা শত্রুকেও বশীভূত করে এবং প্রতিরোধকারীদেরকে সেবকে পরিণত করে।’

চলবে-

Exit mobile version