এই গল্পটি শোনা আমার স্যার প্রফেসর ড. এম এ হামিদ থেকে। তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্যার। খুব অল্প বয়সে স্যার প্রফেসর হন।
আমাকে যদি কেউ বলেন, তোমার সেরা স্যার কে? নিঃসন্দেহে আমি প্রফেসর ড. এম এ হামিদের নাম বলবো। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং বেশ কিছু বইয়ের লেখক ছিলেন। আমি স্যারের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
মাস্টার্সে স্যার আমাদের কৃষি অর্থনীতি পড়াতেন। দু’টি পিরিয়ড একত্রে নিতেন। সময়গুলো দ্রুত ফুরিয়ে যেত। অত্যন্ত হাসিখুশি, দরদী ও সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। স্যার প্রাণখুলে হাসতে পারতেন এবং চমৎকারভাবে কথা বলতেন।
একদিন ক্লাসে স্যার ইংল্যান্ডে তাঁর ছেলের স্কুল ও শিক্ষকের গল্প শোনান। স্যার সেখানে পিএইচডি গবেষক। একদিন তাঁর স্ত্রীসহ ছেলের স্কুলে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া শেষে বলেন, আমার স্ত্রী বাসায় থাকেন, আপনারা কোনো বই সাজেস্ট করলে তিনি ছেলেকে বাসায় একটু পড়াতে পারেন। এ কথার জবাবে শিক্ষক বলেন, Don’t Spoil your child.
ইংল্যান্ডে বাচ্চাদের খেলাচ্ছলে পড়ানো হয়। কোনো হোমটাস্ক নেই। সেখানকার শিশুদের মাঝে স্কুলভীতি নেই। স্কুলে যাওয়ার জন্য তারা থাকে উদগ্রীব। আমরা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আমরা জোর করে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাই। না গেলে বকাঝকা ও মারধর করি। বাচ্চাদের স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছি। একটু বকা দিলে এমনভাবে বেঁকে বসতো যে তাকে দিয়ে কোনো কিছু করানো আর সম্ভব হতো না। প্রশংসা, শুধুই প্রশংসা দ্বারা যা করা যেত তিরস্কার করে কিছুই সম্ভব হতো না।
আমরা ফ্রি প্রাইমারিতে লেখাপড়া করেছি। ক্লাস থ্রিতে গিয়ে বোর্ডের ইংরেজি বই। তার আগে অক্ষর পরিচিতি ছিল। খেলাধুলার মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন কেটেছে। প্রাইমারিতে আমাদের প্রাইভেট পড়া ছিল না। মা শুধু খেয়াল করেছেন হারিকেনের আলোয় পরের দিনের স্কুলের পড়াটা করছি কি না? স্কুলে পড়া না পারাতে অবশ্য শাস্তি ছিল।
আমাদের খেলাধুলার উপকরণ ছিল ফুটবল হিসেবে পোয়াল জড়ানো ও তার উপর ন্যাকড়া পেঁচিয়ে শক্ত করে বাঁধা বলসদৃশ কিছু বা গাছের বাদাম (জাম্বুরা), মাটির গুলি/কাঁচের গুলি, ডাঙ্গুলি, হাডুডু, গাদন, তেঁতুলের বিচির জোড়-বিজোড়, খুলা দিয়ে কিতকিত আরো কতো কিছু। মেয়েদের ছিল মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল, স্কিপিং, কিতকিত, পলানটুকি হরেক রকমের।
ইচ্ছেমত হৈ চৈ লাফ-ঝাঁপ করার সুযোগ ও স্বাধীনতা এখনকার শিশুদের নেই। রবোটের মতো তাদের জীবন। সারাক্ষণ তাদের পেছনে পড়ো পড়ো করে অভিভাবকের ছুটোছুটি। আর একটু ফুরসত পেলেই মোবাইলে গেম। এখন বাসায় ছেলেমেয়ে কম এবং বাবা-মা’রও হাতে সময় নেই। সন্তানকে নিয়ে লুডু খেলা, দাবা খেলা বা একটু হাঁটতে যাওয়ার ফুরসত তাদের নেই এবং প্রয়োজনও অনুভব করে না।
মাঝে-মধ্যে কিছু জরিপ আসে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও সাধারণ স্কুল-কলেজে লেখাপড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে রাজনীতি, প্রশাসন, বিচারবিভাগ, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মাঝে কাদের পার্টসিপেশন বেশি। মেধাবিকাশে মনে হয় সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
সবশেষে বলতে চাই, শিশুর মেধাবিকাশে খেলাধুলা এবং লেখাপড়া সহজ ও আনন্দদায়ক করার কোনো বিকল্প নেই।