মিশর-তুরস্ক সম্পর্ক: শত্রু থেকে বন্ধু!
সরোয়ার আলম, তুরস্ক থেকে
মিশর-তুরস্ক সম্পর্ক: শত্রু থেকে বন্ধু, কতদিন স্থায়ী হবে?
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তুরস্ক সফর করেছেন। এ সফরে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দীর্ঘকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। একসময়ের বৈরি সম্পর্ক কীভাবে বন্ধুত্বে পরিণত হলো, তার পেছনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আলোচনা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ।
চুক্তি ও নতুন সম্পর্কের সূচনা:
মিশরের সিসি আঙ্কারার বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাকে রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান লাল গালিচা বিছিয়ে বরণ করে নেন। এ সফরের প্রধান আকর্ষণ ছিল দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কৌশলগত সহযোগিতা পরিষদের বৈঠক। বৈঠকের পর দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে ১৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যবসায়িক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্বারক।
এরদোয়ান এবং সিসি যৌথভাবে ঘোষণা দেন যে, বর্তমানে ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য শীঘ্রই ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এছাড়া মিশরে তুর্কি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনারও ঘোষণা আসে।
মিশরে বিনিয়োগের কারণ:
মিশরে বিনিয়োগের পেছনে অন্যতম কারণ হলো সেখানে থাকা কোয়ালিফাইড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (QIZ)। এই অঞ্চলগুলোতে উৎপাদিত পণ্য কাস্টমস ছাড়াই আমেরিকায় রপ্তানি করা সম্ভব, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এছাড়াও, মিশরের তুলনামূলক সস্তা শ্রম এবং ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টগুলোর কারণে তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা মিশরে অধিক আগ্রহী।
সামরিক ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা:
সামরিক খাতে মিশর তুরস্ক থেকে ড্রোন কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জ্বালানি খাতে তুরস্ক মিশর থেকে বেশি পরিমাণ LNG গ্যাস আমদানি করার পরিকল্পনা করছে। ভূমধ্যসাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানেও দুই দেশের যৌথ অংশগ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আঞ্চলিক জটিলতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
তুরস্ক এবং মিশরের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। যেমন, তুরস্ক এখনো মিশরের বিরোধী মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিচ্ছে। আবার, মিশর ভূমধ্যসাগরে তুরস্ককে বাধা দিতে গ্রিস এবং অন্যান্য দেশের সাথে কাজ করছে। লোহিত সাগরেও মিশর তুরস্কের কর্তৃত্বের বিরোধিতা করে।
শেষ কথা: দু’দেশের সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে পরিবর্তন করতে পারে। তবে, সব সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। তবুও অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে, যা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।