আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণ। সে উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিলেন মিসর প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
পবিত্র রমজানের ইফতার ও সেহেরী আপ্যায়ন সহ বর্ষবরণের আয়োজন করে রাজধানী কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। দক্ষিণ এশিয়ার সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ আর সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের লোহিত সাগর ও নীল নদের তীরে অবস্থিত বিশ্বের প্রাচীনতম বেসামরিক দেশ মিসর।
হাজার মাইলের ভৌগোলিক দূরত্বে অবস্থিত বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতি ও ভিন্ন সংস্কৃতির দু’টি দেশ। জীবিকা ও পেশাগত দায়িত্বের প্রয়োজনে দেশটির রাজধানী কায়রো সহ বিভিন্ন শহরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বসবাস। একাকী প্রবাসজীবনে পরিবার, আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা এবং দেশীয় স্বাদ ও আমেজের জন্য সারা বছর হা-হুতাশ করা এই প্রবাসীরা হাজার মাইলের দূরত্ব আর সাংস্কৃতিক ভিন্নতার কষ্ট ভুলে গিয়েছিল পহেলা বৈশাখের আয়োজনে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ই এপ্রিল ২০২২) রাজধানী কায়রোস্থ হোটেল শেরাটনে মিসরে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশে ইজিপ্ট এয়ারের সেলস এজেন্ট অ্যালো ঢাকা এভিয়েশন এর যৌথ উদ্যোগে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও স্থানীয় মিসরীয়দের অংশগ্রহণে দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম এর শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে বৈশাখী বরণ উৎসব অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
রঙ-বেরঙের বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশীয় পোশাক, সাজসজ্জা, ভোজনরসিক বাঙালির প্রিয় পিঠা-পায়েস আয়োজন আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শেরাটন এর পুল সাইড প্রাঙ্গণটি হয়ে ওঠে আনন্দমুখর একটি ক্ষুদ্র বাংলাদেশ। দেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর বিদেশের মাটিতে নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরার এ প্রয়াস দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ এবং দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।
পবিত্র রমজানের ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে দূর-দূরান্ত থেকে প্রবাসীরা রঙ-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, পরে ছুটে আসেন বৈশাখী বরণ উৎসবে অংশ নিতে। আগত অতিথিরা ইফতার করেন মিসরের ঐতিহ্যবাহী পানীয় কোষাব, খেজুর, মা’হসী محشى, মুরগির সোপ, ফেরাখ মা’হামমারা فراخ محمرة, কাবাব, এইশ বেলাদী عيش بلدى, তাহিনা, তাজা ফল ও পুদিনার চা দিয়ে।
তারাবীর নামাজের বিরতির পর রাত ৯.৩০মিনিটে প্রধান অতিথি মিসরের পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ড. ঘাদা শ্যালাবি ও অ্যালো ঢাকা এভিয়েশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আলী সামীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর আগত অতিথিদের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম। এ সময় প্রবাসীদের একটি দল ঐতিহ্যবাহী ঢাকঢোল বাজিয়ে ও বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ প্রদক্ষিণ করেন হোটেলটির সুইমিংপুল সাইড।
এসো, হে বৈশাখ, এসো, এসো’ সহ বেশ কয়টা গান ও পরিবেশন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অনুষ্টান শেষে সেহেরী আপ্যায়নে পাঁচ তারকা হোটেল এর মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলাম এর সহধর্মিণী মিস ফাহিমা তাহসিন প্রবাসী ও বিদেশী অতিথিদের জন্য নিজ হাতে তৈরি করে আনেন পহেলা বৈশাখ এর ঐতিহ্যবাহী খাবার- পান্তা ইলিশ, বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, পায়েশ, জিলাপি ও নকশি সহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মিসরে মেক্সিকান রাষ্ট্রদূত অক্টাভিউ ট্রিপ, তার সহধর্মিণী আদ্রিয়ানা ট্রিপ, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক, মিসরীয় এক দল চিকিৎসক, দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, আল আজহার ও কায়রো সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী চিকিৎসক, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।