ঐতিহাসিক নীল নদ আর পিরামিডের দেশ মিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচী ও যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উদ্যাপন করলো বাঙ্গালী প্রবাসীরা।
গতকাল রবিবার (১৫ আগস্ট ২০২১) স্থানীয় সময় সকাল ৯:০০ ঘটিকায় কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। মিসরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ মনিরুল ইসলাম দুতাবাসের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন । সন্ধ্যা ৭:১৫ ঘটিকায় দুতাবাস হল রুমে মোহাম্মদ ফেরদাউস এর উপস্থাপনায় পবিত্র কোরআন থেকে তিলওয়াতের পর রাষ্ট্রদূত মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় এবং ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহিদদের পবিত্র স্মৃতির সম্মানে ও স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ দুতাবাস আয়োজিত শোক দিবস অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন মিসরে অধ্যয়নরত ছাত্র, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রবাসী বাঙ্গালীগণ। ঢাকা থেকে পাঠানো মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এর বাণী সমূহ পাঠ করে শোনান যথাক্রমে, দুতাবাসের দুতালয় প্রধান মোহম্মদ ইসমাঈল হোসাইন, তৃতীয় সচিব মোহাম্মদ আতাউল হক, রফিকুল ইসলাম ও ফারুক হোসেন প্রমুখ।
এরপর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (পি আইডি) থেকে পাঠানো প্রামাণ্যচিত্র ‘বিশ্ববন্ধু বঙ্গবন্ধু’ প্রদর্শন করা হয়, যা দেখে উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মন বেদনা-ভারাক্রান্ত করে তোলে ও বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত কবিতা ও গানের মাধ্যমে শোকদিবসের করুণ স্মৃতি বাঙময় হয়ে উঠে। আলোচনা সভা শুরু হলে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্য থেকে অনেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর আলোকপাত করেন এবং তাঁর অবিস্মরণীয় অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রদূত জনাব মনিরুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন জেল-নির্যাতন ভোগ করে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। সেই দেশের গর্বিত নাগরিক হিসাবে আমরা আজ বিদেশের মাটিতে সগৌরবে অবস্থান করছি। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস তথা বিশ্বের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এক কলঙ্কিত অধ্যায় কিন্তু সেই শোকাবহ ইতিহাস থেকে আমরা দেশপ্রেম ও দেশসেবার সূদৃঢ় শপথ গ্রহণ করব। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, জন্মভূমির প্রতি আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য যেন ভুলে না যাই, সেজন্যই বঙ্গবন্ধুর জীবন-সংগ্রাম বারবার স্মরণ করতে হবে, আমাদের দীক্ষা নবায়ন করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে “রূপকল্প-২০২১” ও “রূপকল্প-২০৪১” বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। তিনি সকল প্রবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশ গড়ার কাজে যার যার সাধ্যমত অবদান রাখার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ই আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়।