বিশ্ব আজ এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন, মনে হয় এই করোনা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়েই আমরা এক নতুন যুগে, নতুন সভ্যতায় পদার্পণ করতে যাচ্ছি।
ভূ-রাজনীতি আজ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আমেরিকা আজ ধনবাদী বিশ্বের নেতৃত্বের পদে নেই। এই পদটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কমিউনিস্ট চীন। গত শতকে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের লড়াই ছিল কমিউনিজমের সঙ্গে। আমেরিকা ছিল তার নেতা। আজ আমেরিকার বিশ্ব আধিপত্য পতনের দিকে। চীন সর্বত্র অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। এটা ঠেকানোর জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রবল চেষ্টা করেছেন, পারেননি।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন ক্ষমতায় আসেন তখন মনে হয়েছিল আমেরিকা চীনের প্রতি নরম পন্থা গ্রহণ করবে। বাইডেন কথা বলেন কম, যাও বলেন তা অত্যন্ত নরম কণ্ঠে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর দেখা গেল তিনি আফগানিস্তানে অত্যন্ত অমানবিক নীতি গ্রহণ করেছেন। চীনকে শুধু হুমকি দিচ্ছেন না, চীনকে জব্দ করার জন্য ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে কোয়াড নামে একটি জোট গঠন করেছেন। চীন চেষ্টা করছে এই কোয়াডে যেন এশিয়ার আর কোনো দেশ যোগদান না করে। বাংলাদেশ তাই চাপের মুখে পড়েছে।
একদিকে আমেরিকা ও ভারতের চাপ কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য, অন্যদিকে চীনের চাপ বাংলাদেশ যেন কোয়াডে যোগদান না করে। এই দুই চাপে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের টিকে থাকা মুশকিল! কোয়াডে রয়েছে ভারত। ভারত আমেরিকাকে দিয়ে কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার বেশির ভাগে চীনের সাহায্য রয়েছে। বাংলাদেশের আমলা ও ব্যবসায়ীদের ভেতর একটা বিরাট চীনপন্থী মহল গড়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা তাই এই সংকটে কোন দিকে যাবেন, কিভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবেন এবং উন্নয়নের গতি রক্ষা করবেন—এই চিন্তা-ভাবনায় পড়েছেন বলে মনে হয়।
একদিকে ভূ-রাজনীতির এই সমস্যা, অন্যদিকে করোনার নব নব সংস্করণের আক্রমণ বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। ব্রিটেনে এখনো মৃত্যুহার ভয়াবহ। বৈজ্ঞানিকরা বলতে পারছেন না এই বিপদ কবে দূর হবে। করোনার আবির্ভাব সারা বিশ্বে একটা পরিবর্তন ঘটিয়েছে। মানুষ আগের মতো মেলামেশা করতে পারে না। মুখে মাস্ক পরে ঘুরতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এর পরও এক নতুন বিশ্ব ও সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠছে।
মনে হয়, আমেরিকা কোয়াড গঠন করেও আগের আধিপত্য ফিরিয়ে আনতে পারবে না। সামাজিক ব্যবস্থায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাট পরিবর্তন আসবে। অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে যাবে। সংবাদপত্রের বাজারের পতন ঘটবে। সবাই অনলাইনে কাগজ পড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য-ব্যাংকিং চলবে অনলাইনে। এই প্রত্যক্ষ সম্পর্করহিত সমাজব্যবস্থা পৃথিবীর মানবতার উপকার করবে, না অপকার করবে তা এখন দেখার বিষয়।
ভবিষ্যতে পৃথিবী কী চেহারা ধারণ করবে, তার সমাজব্যবস্থা কেমন হবে এটা এখন বলা মুশকিল। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞানী মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশনের পর যেমন যন্ত্রনির্ভর সভ্যতার শুরু হয়েছিল, তেমনই বর্তমান করোনা বিপর্যয়ের পর সারা বিশ্ব আরো বেশি যন্ত্রনির্ভর হবে এবং এক নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটাবে।