তালেবানের ঘোষণা: একই শ্রেণিকক্ষে ছেলে ও মেয়েরা পড়তে পারবে না
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আবারও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে কাবুল বিমানবন্দরের অদূরে আবাসিক ভবনে একটি রকেট আঘাত হানে। এতে এক শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ। প্রায় একই সময়ে কাবুলে বিস্ফোরক পদার্থবোঝাই একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ড্রোন হামলার সঙ্গে আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা গতকাল রাত ১টা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে তালেবানের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, এখন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলে ও মেয়েদের একই শ্রেণিকক্ষে পড়ানো যাবে না। তবে নারীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে পারবেন। তালেবান আরো জানিয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আকুন্দজাদা শিগগিরই জনসমক্ষে আসবেন। বর্তমানে কান্দাহারে অবস্থান করছেন তিনি।
কাবুল বিমানবন্দরের আশপাশে যেকোনো সময় আবারও হামলা হতে পারে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এমন সতর্কবার্তার কয়েক ঘণ্টা পরেই গতকালের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দটি আসে বিমানবন্দরের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। হামলার শিকার হওয়া ভবন ও কাবুল বিমানবন্দরের দূরত্ব প্রায় তিন মাইল। বিস্ফোরণের পর টুইটারে একটি ফুটেজ পোস্ট করেন সাংবাদিক শাফি করিমি। ফুটেছে দেখা যায়, একটি ভবন থেকে ব্যাপক পরিমাণে কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। আশপাশের ভবনের ছাদে অনেক মানুষ ছোটাছুটি করছে। ভবনের নিচেও অনেক মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। বিস্ফোরণের পরেই কাবুলের পুলিশপ্রধান রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে এক শিশুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে গতকাল একই সময়ে আত্মঘাতী হামলাকারীদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা জানান, ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখার (আইএস-কে) জঙ্গিরা গাড়িবোঝাই বিস্ফোরক পদার্থ নিয়ে কাবুল বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। তাদের লক্ষ্য করে সফল ড্রোন হামলা চালানো হয়। আফগানিস্তানের বাইরে থেকে এই হামলা পরিচালনা করা হয় বলেও জানান মার্কিন কর্মকর্তারা।
তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ড্রোন হামলা ও আবাসিক ভবনে বিস্ফোরণ দুটি আলাদা ঘটনা। কিন্তু আবাসিক ভবনে কারা হামলা চালিয়েছে তা নিশ্চিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা একটি হামলাই চালিয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মার্কিন ড্রোন হামলায় সাধারণ লোকজন হতাহত হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী সাধারণ লোকজন হতাহত হয়নি। এর পরও তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী গত শনিবার সন্ধ্যায় জো বাইডেন বলেন, ‘আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিমানবন্দর এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে আবারও বড় ধরনের হামলা হতে পারে।’
পেন্টাগন জানিয়েছে, বিমানবন্দরে যে হামলার আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা ড্রোন হামলার মধ্য দিয়ে প্রতিহত করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের ‘আবি’ ফটকে আত্মঘাতী হামলা চালায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখা (আইএস-কে)। তাতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ১৩ সদস্যসহ ১৭৫ জন নিহত হয়। ওই দিনও হামলার সতর্কবার্তা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ।
বৃহস্পতিবারের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে আইএস-কের অবস্থান লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের হামলায় বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের মূল পরিকল্পনাকারীসহ আইএস-কের দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন দেশের সামরিক-বেসামরিক লোকজনের আফগানিস্তান ছাড়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও পোলান্ড এরই মধ্যে লোকবল প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকালের মধ্যে মার্কিন সেনারাও আফগানিস্তান ছাড়বে। গতকাল কাবুল বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ প্রায় এক হাজার বেসামরিক লোকবল সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছিল। বিমানবন্দরে নিয়োজিত এক বিদেশি সামরিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘বিদেশিদের পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা সব লোকজনকে আমরা রবিবারে (গতকাল) মধ্যে সরিয়ে নিতে চাই। এরপর অবশিষ্ট বিদেশি সেনার কাবুল ত্যাগ করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার মানুষকে আফগানিস্তানকে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাবুলে একটি ‘সেফ জোন’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। আজ সোমবার জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদের বৈঠকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই আহ্বান জানাবেন। বৈঠকে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের নেতারা আফগানিস্তান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।
দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় কট্টর ইসলামপন্থী এই সংগঠনটি। এর পর থেকেই নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা। গতকাল তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, তাঁরা একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিসভার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এর আগে তালেবানের একাধিক নেতার বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, দেশ পরিচালনার জন্য আপাতত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবে তালেবান, যেখানে দেশটির সব জাতি-গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।