মিসরে অনুষ্ঠিত হলো ম্যক্সিকান জাতীয় উৎসব, যেখানে যোগ দিতে মৃতরা নেমে আসেন এই পৃথিবীতে।
দিবসটি তাদের কাছে একটি ধর্মীয় প্রাক-হিস্পানিক ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
গত শনিবার (২ নভেম্বর) মিশরে মেক্সিকান দূতাবাসের রাষ্ট্রীয় বাসভবনের বাগানে পালিত হলো ‘দিয়া দ্য লস মুয়ের্তোস’ বা মৃতদের দিবস। প্রতি বছর নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিন মেক্সিকো সহ দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে দিবসটি পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছররের ন্যায় এবারও মিশরে অবস্থানরত মেক্সিকান কমিউনিটি ও মিশরের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের নিয়ে দিবসটি পালন করলো কায়রোস্থ মেক্সিকান দূতাবাস। আগত অতিথিদের আপ্যায়নে ছিল দিবসটির বিশেষ খাবার প্যান দে মুয়ের্তোস (মৃতের রুটি), গরম চকলেট ও দেশটির ঐতিহ্যবাহী পানীয় ভার্জিন মার্গারিটা।
এদিনে তাদের পরিবাররের মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ করে পরিজনদের সম্মান দেখাতে যে অনুষ্ঠান করে তা একেবারেই নিজেদের প্রাচীন ধর্মীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য।
মেক্সিকোর খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস বিশেষ এই দিনে পরপার ও পার্থিব জগতের মাঝামাঝি একটি পথ তৈরি হয়। যার মাধ্যমে মৃত স্বজনদের আত্মা দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে বাড়িতে আসেন আশীর্বাদ নিয়ে।
তারা আরও বিশ্বাস করেন, অক্টোবরের ৩১ তারিখ মধ্যরাতে স্বর্গের দ্বার খুলে যায় এবং সমস্ত মৃত শিশুদের আত্মাকে তাদের পরিবারের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার জন্য মিলিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এই মৃত শিশুদের আত্মাকে অ্যাঙ্গেলিটোস বলা হয়। নভেম্বরের ২ তারিখ পরিণত বয়স্ক মৃত মানুষদের আত্মার জন্য পালিত হয়। ওই দিন নাকি তারাও তাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবে যোগ দিতে নেমে আসেন পৃথিবীতে।
দিবসটি পালনের জন্য দেশটির প্রতিটি বাড়িতে সুন্দর একটি বেদি তৈরি করা হয়। মোমবাতি, ওয়াইল্ড মেরিগোল্ড বা বনজ গাঁদা ফুল ও উজ্জ্বল লাল রঙের মোরগ ঝুটি ফুল, ফুলের ঝুড়ি, বিভিন্ন ফল দিয়ে সাজানো ঝুড়ি, পরিবারের মৃত ব্যক্তিদের পছন্দের ঐতিহ্যবাহী খাবার, শুকনো খাবার, প্যান দ্য মুয়ের্তোস ‘মৃতদের রুটি’ ও ঐতিহ্যবাহী পানীয় ট্যাকিলা ও বিয়ার দিয়ে সাজানো হয় এই বেদি। তাছাড়াও বেদিতে অন্যান্য খাবারসহ তৃষ্ণার্ত আত্মাদের জন্য রাখা হয় পানি।
এই উৎসবের আকর্ষণীয় ও বিচিত্র বিষয় সুগার স্কাল ( চিনির তৈরি মাথার খুলি) এবং ফোক আর্ট স্কেলিটন। তারা বিশ্বাস করে তাদের ছেড়ে যাওয়া প্রিয়জনদের আত্মারই প্রতিনিধি এই সুগার স্কাল। এই কারণে অনেকেই এই সুগার স্কালের কপালে তাদের মৃত প্রিয়জনদের নাম লিখে দেয়।
তারা এও বিশ্বাস করে, সুখী আত্মারা তাদের রক্ষা করে এবং তাদের পরিবারের জন্য সৌভাগ্য তথা সদিচ্ছা বয়ে আনে। এভাবেই উৎসবের মধ্য দিয়ে পরিবারের জীবিত এবং মৃত আত্মার পুনর্মিলন হয় যাতে করে প্রত্যেকের পরিবারে সম্পর্কের বন্ধন অটুট থাকে।
মেক্সিকোতে এ দিবসটি সরকারি ছুটির দিন।