এক্সপো 2020 দুবাইয়ের অত্যাশ্চর্য এবং অভূতপূর্ব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত আবারো প্রমাণ করেছে যে এটি তাদের এমন দূরদর্শী নেতৃত্ব, যা অসম্ভবকে চ্যালেঞ্জ করে ভবিষ্যতের সন্ধান ও মানবতার জন্য আশার দ্বার উন্মোচন করে এবং তার সক্ষমতার প্রতিফলন। এক্সপো 2020 দুবাইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, যা একতার সুর এবং চিত্তাকর্ষক মিশ্রণের প্রতিনিধিত্ব করে, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সভ্যতার এক জায়গায় তথা সমগ্র বিশ্বকে তার বিভিন্ন বর্ণ ও বৈচিত্রের মাঝে একত্রিত করে।
আরবি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের নজরে পড়ার মত জমকালো এই অনুষ্ঠানটি প্রিয় এই দেশটির জন্য শ্রেষ্ঠত্ব এবং অর্জনের একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি করোনাভাইরাস মহামারীর সতর্কতার আলোকে দেশের কাঠামোগত সক্ষমতা এবং সম্ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের হৃদয়ে নতুন আশা ও প্রশান্তি ছড়িয়ে দিয়ে সহাবস্থান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব মানবতা কিভাবে মহামারী কাটিয়ে উঠতে পারে এবং একটি উন্নত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে পারে তার সুস্পষ্ট উদাহরণ। এক্সপো 2020 দুবাই শুরু করে, আমিরাতীরা প্রমাণ করেছে যে তারা দেশের জন্য গর্ব এবং আশা নিয়ে পূর্ণ ইতিহাস আঁকতে পারে, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং আনুগত্যের ভিত্তি রচনা করা যায়।
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজনের তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গত ১ অক্টোবর শুরু হয়েছে শিল্প-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই মিলনমেলা। এতে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় ১৯২টি দেশ। উদ্ভাবনে মানুষের কৃতিত্ব উদযাপন করতে দুবাই এক্সপোতে একত্রিত হবে গোটা বিশ্ব। এতে নিশ্চিতভাবেই ইতিহাস গড়ার মতো দারুণ কিছু আবিষ্কার দেখা যাবে।
বিজ্ঞ নেতৃত্বের সাথে একদল দানশীল মানুষ সবসময় যেকোন ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করে। এই ঐতিহাসিক মুহুর্তে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞ নেতৃত্ব এবং জনগণ তার নবজাগরণের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান দ্বারা প্রবর্তিত উত্তরাধিকারকে স্মরণ করছে, যা তাদের দূরদর্শী নেতৃত্বকে টিকিয়ে রেখেছে এবং আরও অনেক লক্ষ্য অর্জন করেছে। আট বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং আমিরাতীদের মন এবং প্রতিভার প্রতিফলনকারী জাতীয় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গুলোর সমস্ত সম্ভাব্য প্রচেষ্টার পর, বিশ্ববিখ্যাত এই ইভেন্টটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈশ্বিক মর্যাদাকে দারুণভাবে প্রতিফলিত করেছে।
বাণিজ্যিক এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ইউএস ডলার। দুবাই এক্সিভিশন সেন্টারের ৪৩৮ হেক্টর জায়গায় বসে এই প্রদর্শনী। দুবাই এক্সপোর প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘কানেক্টিং মাইন্ডস, ক্রিয়েটিং দ্য ফিউচার’ তথা ‘মনসংযোগে ভবিষ্যৎ নির্মাণ’। মানবিক চেতনা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার জয়গান হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে।
আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ৪ দশমিক ৩৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বসেছে ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে দুর্দান্ত এই আয়োজন। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও বিশেষ দিবসে সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উপভোগ করা যাবে মেলা। দুবাই শহরে এমন বৃহৎ আয়োজন এটাই প্রথম নয়। ১৮৫১ সালে লন্ডনের হাইড পার্কে বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হয়েছিল। তখন এটাকে বলা হয়েছিল লন্ডনের ‘গ্রেট এক্সিবিশন’। সেই থেকে বিশ্বব্যাপি উদ্ভাবনী অর্জন উদযাপনের এমন আয়োজন জনপ্রিয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম আরব দেশ হিসেবে এই বৈশ্বিক ইভেন্টটি আয়োজন করার সুযোগ পায়। ২০১৩ সালে তুরস্ক, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও রাশিয়াকে পরাজিত করে এই ইভেন্টের আয়োজক হওয়ার গৌরব অর্জন করে আরব আমিরাত।
এবারের এক্সপোর লোগো লৌহযুগের প্রাচীন আংটির অনুকরণে বানানো হয়েছে, যেটি দুবাই শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুমের আবিষ্কৃত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। দুবাই এক্সপোর আয়োজকরা আশা করছেন, করোনা মহামারিতে সৃষ্ট জটিলতা সত্ত্বেও ছয় মাসের এক্সপোতে প্রায় আড়াই কোটি ক্রেতা-দর্শনার্থী অংশ নেবেন।
এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের দর্শকদের কোভিড-১- ভ্যাকসিন নেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে অথবা আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে হবে। টিকা না দেওয়া দর্শনার্থীরা এক্সপো সংলগ্ন করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।